চট্টগ্রামরাজনীতি

কার পক্ষে আওয়ামী লীগ, শেঠ নাকি ছালাম?

কার পক্ষে আওয়ামী লীগ, শেঠ নাকি ছালাম?

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন দলের নগর সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। তবে জাতীয় পার্টির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সমঝোতার কারণে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন আসনটির বর্তমান এই এমপি। ওই আসনে জাতীয় পার্টির হয়ে লড়ছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ। তবে, খুব সহজেই ‘ভোটযুদ্ধে’ জয়ের স্বাদ জুটবে না তাঁর কপালে— এমনটাই মনে করছেন অনেকে। ভোটের মাঠে এখানে রয়েছেন আরও ৯ প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে ‘হেভিওয়েট’ স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শেঠের জন্য।

এদিকে, এই আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কার পক্ষে অবস্থান নেবেন— তা নিয়ে চলছে নানা কানাঘুষা। বিষয়টি নিয়ে সীমাহীন আগ্রহ তৈরি হয়েছে সাধারণ জনগণেরও। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত! কেন্দ্র থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সিদ্ধান্ত এলেই জানা যাবে কার পক্ষে মাঠে থাকবেন তাঁরা।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ দলীয় সিদ্ধান্ত; যেভাবে বলা হয়, সেভাবেই হবে। এখানে আমার কোনো ব্যক্তিগত বা নগর আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যা বলবেন তা-ই হবে। উপর (কেন্দ্র) থেকে যেভাবে সিদ্ধান্ত আসবে; সেভাবেই কাজ করব সবাই।’

একই কথা জানালেন বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজা। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘এখনও এই বিষয় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি; উপর থেকেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। উপর থেকে কিছু জানালেই এরপর সিদ্ধান্ত হবে নেতাকর্মীরা কার পক্ষে কাজ করবেন।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালখালীর পৌরসভার মেয়র মো. জহুরুল ইসলাম জহুর বলেন, ‘আমরা এখনও কোনো পক্ষ নির্দিষ্ট করিনি। দলের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের জেলা আওয়ামী লীগ ও থানা আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত দেবে; সেই আলোকেই আমরা আগাবো।’

নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আমার পক্ষেই থাকবেন : সোলায়মান শেঠ

জাতীয় পার্টির হয়ে এখানে লড়ছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ। সমঝোতার কারণে নৌকার প্রার্থী না থাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে থাকবেন কীনা—প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাঁরা (আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী) আসছেন, যাচ্ছেন; কথা বলছেন, কাজ করছেন। নির্বাচন তো একটা উৎসব। এখানে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই; শুধু স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন; যিনি আবার আওয়ামী লীগের নেতা।’

‘তবে আশা করছি, আমাদেরকে যখন সম্মান করে আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে; নিশ্চয়ই নগর আওয়ামী লীগ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের জন্য কাজ করবেন। আবার সরাসরি বলছি না যে, তারা আমার জন্য কাজ করবেন। যেহেতু আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেই; তাহলে তারা অবশ্যই যোগ্য নেতা খুঁজে নিবেন এবং আমার জন্যই কাজ করবেন।’-যোগ করেন সোলায়মান শেঠ।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মহাজোটসহ কোনো জোটে নেই। আমরা তাদের (আওয়ামী লীগ প্রার্থী) কিছু আসন ছেড়ে দিয়েছি; তারাও আমাদের (জাপার প্রার্থী) কিছু আসন ছেড়ে দিয়েছেন। মূলত সিনিয়র হিসাব করেই আসনগুলো একে-অপরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, ‘এবার আমরা (জাপা) ২৮৩ আসনে নির্বাচন করছি। আওয়ামী লীগ ২৬২ আসনে নির্বাচন করছে। এবারের নির্বাচন; নির্বাচনই হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে— সেটাকে এক্সেপ্ট করেই আমরা নির্বাচনে এসেছি। জাতীয় পার্টি সবসময় নির্বাচনমুখী দল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কথা দিয়েছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কেউ কাউকে ছাড় দেয়নি। সম্মান জানিয়ে আসন ছাড় দেওয়া হয়েছে।’

তবে, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালামের সঙ্গে ভোটের মাঠে ‘লড়াই’হবে জানিয়ে শেঠ বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ভোটের মাঠে মধুর লড়াই হবে। তবে কে বেশি জনপ্রিয় সেটা বলা মুশকিল। তিনি (আবদুচ ছালাম) আমার বড়ভাই; আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি। তিনি ১০ বছর সিডিএর চেয়ারম্যান ছিলেন। খেলার মাঠে তো হার-জিত আছে। কেউ হারবে আবার কেউ জিতবে। যার কপালে আল্লাহ রাখবেন তিনিই জিতবেন।’

বোয়ালখালীবাসীর দাবির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বোয়ালখালীর মানুষের অবশ্যই একটা দাবি আছে— নতুনরূপে কালুরঘাট সেতু করা। সেটার জন্য বাদল ভাই, মোছলেম ভাই, নোমান ভাই চেষ্টা করেছেন। আমিও সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সবাই যখন চেষ্টা করবে; তখন সেটা অবশ্যই হবে। তাই আমি যদি নির্বাচিত হই, জনগণ আমাকে সুযোগ দেন; তাহলে আমি নতুন সেতু নির্মাণ করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গেই আছে : ছালাম

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। তবে দল মনোনয়ন না দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের মাঠে নামেন তিনি। দলীয় সিদ্ধান্তে এখানকার নৌকার প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় নেতাকর্মীরা আপনার পক্ষে থাকবেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুচ ছালাম বলেন, ‘অবশ্যই থাকবে। আমি তো দলের একজন কর্মী; নগর আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল। স্বাভাবিকভাবে দলের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে থাকবেন। ইনশাআল্লাহ, অবশ্যই থাকবেন।’

ভোটের লড়াইয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নাকি আপনি এগিয়ে— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তিনি (সোলায়মান শেঠ) তো জাতীয় পার্টির নেতা। অবশ্যই তাঁর সঙ্গে ভোটের লড়াই হবে। নির্বাচনে যতবেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তত বেশি মানুষ নির্বাচনমুখী হবে।’

কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ নিয়ে বোয়ালখালীবাসীর ‘আক্ষেপ’ ঘুচাতে প্রতিশ্রুতি নয় বাস্তবায়নে বিশ্বাস করেন বলে জানান স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতিতে নয়, বাস্তবায়নে বিশ্বাস করি। যদি সুযোগ পাই; ইনশাআল্লাহ অবশ্যই চেষ্টা করবো। জনগণ যদি আমাকে সুযোগ দেয়, তাহলে ইনশাল্লাহ সফল হব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *