আনোয়ারাচট্টগ্রাম

কেইপিজেডের ‘অবহেলায়’ সন্তান হারানো মায়ের বিলাপ থামছে না

‘আরে ফেলাইয়েরে কেনে গেলি রে পুত। আই ত সহ্য গরিত ন পারির দে পুত (আমাকে ফেলে কেন চলে গেলে আমার ছেলে। আমি তো সহ্য করতে পারছি না ছেলে।)’

চট্টগ্রামের আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের ছয় নাম্বার ওয়ার্ডের দেয়াংবাজার এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (কেইপিজেড) একটি ডোবার পাশ থেকে ভেসে আসছে এমন বিলাপ। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এমন বিলাপ করছিলেন পারভিন আকতার। মাঝেমধ্যেই অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন তিনি।

গত মঙ্গলবার (২৮ মে) কেইপিজেড সংলগ্ন ডোবায় পড়ে মারা যায় শিশু মুহাম্মদ রাহাত হোসেন (৭)। সে গুয়াপঞ্চক আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেনের ছেলে।

শনিবার (১ মে) কেইপিজেড সংলগ্ন ডোবায় গিয়ে দেখা যায়, রাহাতের স্বজন ও প্রতিবেশিরা নানাভাবে রাহাতের মা পারভিন আকতারকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিলাপ করে পারভিন বলছেন, ‘আল্লাহ, ছেলেকে ছাড়া আমি কীভাবে বাঁচব।’ স্বজনরা তাকে বারবার ঘরে নিয়ে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর তিনি ডোবার কাছে চলে আসেন এবং পাগলের মতো বিলাপ করতে থাকেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ ছেলেদের খেলার মাঠ দখল করে সেখান থেকে মাটি তুলে নিয়েছে। বৃষ্টির কারণে ওই মাঠটি বিশাল ডোবায় পরিণত হয়েছে। সেখানে কোনও ঘেরা-ভেড়া দেয়নি তারা। ফলে শিশুরা সহজে খেলার মাঠে যেতে পারে না। তখন এই ডোবায় পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে।’

‘এর আগেও গত বছর এই ডোবায় পড়ে একটি মেয়ে শিশু মারা গেছে। দুই মাস আগে আরও দুইটি শিশু পড়ে গিয়েছিল। স্থানীয়রা দেখাতে ওই শিশুগুলো প্রাণে বেঁচে যায়। সেখান থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি না কাটলে, অথবা ঘেরা-ভেড়া দিয়ে রাখলে এসব ঘটনা ঘটতো না। কেইপিজেডের অবহেলার কারণে এই ঘটনাগুলো ঘটেছে।’ বলেন তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ইদ্রিস বলেন, শিশু রাহাতের মৃত্যুর ঘটনাটি কেইপিজেডের এমডি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহজাহান চৌধুরীকে জানানো হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’

‘দরিদ্র পরিবারটি তাদের একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছে। কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের উচিত, শিশু রাহাতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া। আগামীতে যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সে বিষয়ে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ যেন ব্যবস্থা নেয়, সেই দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক ইমন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমি কথা বলবো। সেখানে যাতে আর দুর্ঘটনা না ঘটে, সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *