কোটাবিরোধী আন্দোলন যানজট ছড়াচ্ছে
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টানা তৃতীয় দিনের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এখন তারা নগরের লালখানবাজারে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। ফলে, লালখানবাজার থেকে জিইসিমুখী সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
রবিবার (৭ জুলাই) বিকেল চারটার দিকে নগরের ষোলশহর স্টেশন থেকে মিছিল শুরু করে শিক্ষার্থীরা দুই নম্বর গেট এলাকায় এসে অবস্থান নেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে বহদ্দারহাট অভিমুখে যেতে চাইলেও পুলিশি বাধায় তারা পথ পরিবর্তন করেন। পরে জিইসি হয়ে লালখান বাজারে সড়কে অবস্থান নেন।
সরেজমিনে লালখানবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বহদ্দারহাট-জিইসি হয়ে টাইগারপাসগামী এবং টাইগারপাস থেকে বহদ্দারহাটগামী গাড়িগুলো ইঞ্জিন বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে লালখানবাজার এলাকাতে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। যানজটের কবলে পড়েছেন অফিসফেরত যাত্রীসহ কর্মজীবীরা।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা দুই নম্বর গেইট থেকে মিছিল নিয়ে জিইসি হয়ে লালখানবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের ব্যানারে এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।
২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।
ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।
ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
রিটের শুনানি নিয়ে ৫ জুন ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, তবে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে কোটা রাখা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।