রাজনীতি

কোটা ইস্যুতে ‘যৌক্তিক ও স্থায়ী সমাধান’ চাইল ছাত্রলীগ

সরকারি চাকরির সব গ্রেডে কোটার সংস্কার চেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে সময়োপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কোটা ব্যবস্থার একটি যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছে তারা।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন লিখিত বক্তব্যে এই দাবি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, কোটা ব্যবস্থায় একটি যৌক্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান ও সংস্কার আনা এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কোনো অবরোধ বা জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি করে ‘স্পট ডিসিশন’ গ্রহণ করা নয়, বরং একটি সমন্বিত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রকাঠামোর প্রেক্ষিতে একটি যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ প্রয়োজন। কিন্তু তেমন কোনো সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান না জানিয়ে এমনকি আদালতের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই কেন এই অনিঃশেষ আন্দোলন?

শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আন্দোলনের নামে অনিঃশেষ অবরোধ কার্যক্রম চালানো কোনোভাবেই দাবির সুষ্ঠু সমাধান নিয়ে আসতে পারে না। চলমান এইচএসসি পরীক্ষা, তীব্র তাপদাহ এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনায় সড়ক অবরোধ, নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি থেকে তাদের অবিলম্বে ফিরে আসতে হবে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিবেশ স্বাভাবিক রাখবে, এটিই সবাই প্রত্যাশা করে।

২০১৮ সালের পরিপত্র নিয়ে জানতে চাইলে সাদ্দাম বলেন, আমরা ২০১৮ সালের পরিপত্রের যৌক্তিক সংস্কার চাই। আজকে আমরা কিছু তথ্যের মাধ্যমে দেখিয়েছি কেন কিছু কোটা দরকার।

এসময় ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের কারণে নারী, জেলা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সুযোগ সংকুচিত হওয়ার তথ্য তুলে ধরেন সাদ্দাম হোসেন। তার দেওয়া তথ্যমতে, কোটা থাকা অবস্থায় ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসে নারীদের চাকরি হয় যথাক্রমে ২৫.৮৯ শতাংশ, ২৪.৭৩ শতাংশ এবং ২৬.৮৭ শতাংশ। অপরদিকে কোটা তুলে দেওয়ার পর ৪০, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে নারীদের চাকরি হয় ২১.০৮ শতাংশ, ২১.২০ শতাংশ এবং ১৭.০৫ শতাংশ। ৪০তম বিসিএসে দেশের ২৪টি জেলা থেকে এবং ৪১তম বিসিএসে ১৮টি জেলা থেকে একজনও বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশকৃত হয়নি। এছাড়া কোটা থাকা অবস্থায় ৩১ থেকে ৩৮তম বিসিএসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১৭৯ জন সুপারিশকৃত হন। কোটা বাতিলের পর ৩৯তম বিসিএসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২৪ জন সুপারিশ পেয়েছেন এবং ৪০ ও ৪১ বিসিএসে সুপারিশ পেয়েছেন দুজন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ কোনো বাধা দেবে কি না জানতে চাইলে সাদ্দাম বলেন, আমরা তাদের আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছি। তবে আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থী সমাজকে জিম্মি করে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করলে ছাত্রলীগ তা রুখে দেবে।

আদালতের আদেশের পরও আজ শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলনের (ব্লকেড) ঘোষণা দিয়েছেন, এটিকে হঠকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের ‘কোটা না মেধা’ স্লোগান নিয়ে সাদ্দাম বলেন, যেখানে সরকারি চাকরির প্রতিটি পরীক্ষার্থীতেই একজন পরীক্ষার্থীকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভার প্রতিটি ধাপ পার হয়ে আসতে হয়, তাই ‘কোটা না মেধা’ স্লোগানটি একটি ভিত্তিহীন, কল্পনাপ্রসূত এবং উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা। এখানে মেধার বিপরীতে মেধার প্রতিযোগিতায় সমাজের অনগ্রসর অংশকে কিছুটা এগিয়ে দেওয়া হয়, যা পুরোপুরি ন্যায় ও সংবিধানসম্মত।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *