ধর্ম

কোরবানির আগে নখ-চুল না কেটে থাকতে হবে?

সামর্থ্যবানদের জন্য জিলহজ মাসের অন্যতম ওয়াজিব আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

কোরবানির দিনের আমলসমূহের মধ্য থেকে পশু কোরবানি করার চেয়ে কোনো আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক প্রিয় নয়। কিয়ামতের দিন এই কোরবানিকে তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে। আর কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ তায়ালার নিকট কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কোরবানি কর। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৪৯৩)

নখ-চুল না কাটা…

কোরবানি পালন করবেন এমন ব্যক্তিদের জন্য জিলহজের চাঁদ ওঠার পর প্রথম ১০ দিন কোরবানির আগ পর্যন্ত শরীরের কোনো প্রকার চুল-পশম ও নখ না কাটা মুস্তাহাব।

নখ-চুল কখন কাটবেন?

অর্থাৎ, কোরবানিদাতা নিজের কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার পর চুল-নখ ইত্যাদি কাটবেন। কারণ হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম বলেন,

যার কোরবানির পশু রয়েছে, সে যেন জিলহজ মাসের নতুন চাঁদ ওঠার পর থেকে কোরবানি করার পূর্ব পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৯১)

তবে এই মুস্তাহাব হুকুম তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা এর ওপর আমল করলে নখ কাটা ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কারের মেয়াদ ৪০ দিন অতিক্রম করবে না। কিন্তু এর ওপর আমল করতে গিয়ে যদি ৪০ দিন অতিক্রান্ত হয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে ৪০ দিনের ভেতরে অবশ্যই তা পরিষ্কার করে নেবে।

হজরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, গোঁফ ছাঁটা, নখ কাটা এবং বগলের লোম উপড়ে ফেলা এবং নাভির নিচের লোম ছেঁটে ফেলার জন্য আমাদের সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল যে, আমরা তা ৪০ দিনের অধিক দেরি না করি। (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৭)

তবে যে ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব তিনি এ আমলটি করার চেষ্টা করবেন। কারণ, সাহবায়ে কেরাম ও তাবেয়িরাও (সাহাবিদের পরবর্তী যুগের আলেম) এ দিনগুলোতে শিশুদের চুল-নখ কাটা অপছন্দ করতেন।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এক নারীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। ওই নারী জিলহজের দশকে ছেলের চুল কেটে দিচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, সে যদি কোরবানির দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করত— অনেক ভালো হতো। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস : ৭৫৯৫)

কোরবানি করবেন না, ব্যক্তির জন্যও এই আমল…

আর এ আমলটি কোরবানির সামর্থ্য নেই এমন ব্যক্তির জন্য করাও উত্তম। তবে যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব তার জন্য আমলটি তুলনামূলক অত্যাধিক গুরুত্ব রাখে।

রাসূলুল্লাহ সা. এক ব্যক্তিকে বললেন— আমাকে কোরবানির দিন ঈদ পালনের আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা দিয়ে কোরবানি করব? নবীজি (সা.) বললেন- না, তবে তুমি নখ, চুল ও মোঁচ কাটবে এবং নাভির নীচের পশম পরিস্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৭৭৩, ৫৯১৪)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *