অন্যান্য

কোরবানির পশু কেনার আগে দেখতেই হবে যেসব বিষয়

কোরবানির হাটে পশু কিনে ঠকে যাওয়ার অভিযোগ বিস্তর। অসাধু বিক্রেতারা কখনও কখনও দেশি পশুর কথা বলে ধরিয়ে দেন মোটাতাজা করা পশু। আবার কখনও কখনও মোটাতাজা করা পশুর নামে গছিয়ে দেন কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা পশু। এরমধ্যে কখনও আবার ক্রেতারা পছন্দের পশু পেলেও কোরবানি দেওয়ার মতো নির্দিষ্ট বয়স নিয়ে শঙ্কায় পড়েন অনেকেই। নিরোগ পশু চেনা নিয়েও ঝামেলায় পড়েন কেউ কেউ। কিন্ত কোরবানির হাটে পছন্দের পশুর নির্দিষ্ট বয়স হয়েছে কিনা কীভাবে বুঝবেন? কিংবা আপনার পছন্দের পশু দেশি, কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা, নাকি অসুস্থ- জানবেন কীভাবে? চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি ও ডেইরি সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম এম হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে কথা বলে এসব প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছে চট্টলার বার্তা।

চাপ দিলে মাংস দেবে যায় কৃত্রিম মোটাতাজা গরুর:

প্রাকৃতিক উপায়ে গরুসহ অন্যান্য পশু মোটাতাজা করণ পদ্ধতি খামারিদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তবে কোনো কোনো অসাধু খামারি অল্প সময়ে বেশি মুনাফা পেতে স্টেরয়েড ও বিভিন্ন ক্ষতিকর হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে পশু মোটাতাজা করার চেষ্টা করেন। এরমধ্যে এই পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ করা হয় গরুর ওপর। এসব পশুর মাংস খেলে শরীরে বাসা বাধতে পারে ভয়ঙ্কর নানা রোগ।

গরুর আচরণ, হাঁটাচলা, খাবারে অনাগ্রহ, শ্বাস-প্রশ্বাস, লালা ফেলার মাত্রা, নাকের ওপরের অংশের শুষ্কতাসহ কিছু বিষয় দেখে জানা যাবে গরুর ধরণ। তবে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরু চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় দেহে আঙুলের চাপ দেওয়া। এসব গরুর দেহের মাংসাল অংশে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে দেবে যায়, তা স্বাভাবিক হতে সময় লাগে বেশ কিছুক্ষণ। কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরু ক্লান্ত ও নির্জীব দেখায়, নাড়াচাড়া আর হাঁটাচলাও করে কম। এসব গরুর সামনে খাবার রাখলেও তাতে আগ্রহ দেখায় না, শ্বাস-প্রশ্বাস থাকবে তুলনামূলক দ্রুত। অন্য যে কোনো স্বাভাবিক পশুর চেয়ে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরুর মুখ দিয়ে লালা পড়ে বেশি, নাকের ওপরের অংশ বা মাজেল শুষ্ক থাকে।

আকারে ছোট হয় দেশি গরু:

বাংলাদেশে স্বীকৃত কোনো মাংসাল গরুর জাত নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই দেশি গরু আকারে ছোট হয়। দেশে সাধারণত ৫ জাতের গরু পাওয়া যায়। এরমধ্যে চিটাগাং ক্যাটেল, পাবনা ক্যাটেল ও নর্থ বেঙ্গল গ্রেড সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। চট্টগ্রামের স্থানীয় গরুর মধ্যে রয়েছে আবার রেড চিটাগাং। এই জাতের গরুর দেহের রঙ লালচে হয়। চোখের পাতা থেকে শুরু করে মুখ, অনেক ক্ষেত্রে লেজের চুলও লালচে রঙের হয়ে থাকে। গরুর দেহ তুলনামূলক ছোট হয়, উচ্চতা সাড়ে তিন ফুটের মতো এবং দৈর্ঘ্যে তিন থেকে সাড়ে তিন ফুটের মতো হয়। লিঙ্গভেদে একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর ওজন হয় আশি থেকে আড়াইশ কেজি পর্যন্ত। আর পাবনা ক্যাটেলের ক্ষেত্রে গরুর গায়ের রঙ সাধারণত লাল, ধূসর বা এই দুই রঙের মিশ্রণ হয়। এই জাতের পুরুষ গরুর রঙ ঘাঢ় ধূসর আর সাদা রঙের মাঝামাঝি যে কোনো রঙের হতে পারে। চোখের পাতা, শিং এবং লেজের প্রান্ত কালো রঙের হয়। উচ্চতা চার ফুটের মত এবং দৈর্ঘ্যে পাঁচ ফুটের মতো হয়। আর ওজন আড়াইশ থেকে চারশ কেজি পর্যন্ত হয়।

দেখেই চেনা যায় অসুস্থ গরু:

এখন গরুর যেসব রোগ দেখা যায় এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় এসএসডি বা লাম্পি রোগ আর এফএমডি বা ক্ষুরা রোগ। লাম্পি রোগ হলে গরুর গায়ে গুটি গুটি দানার মতো থাকে, দেখলেই বুঝা যায়। আর ক্ষুরা রোগ হলে গরুর ক্ষুরায় ক্ষত বা ঘা হয়। মুখের বিভিন্ন স্থানেও ঘা হয়, এতে মুখ দিয়ে লালা পড়ে। তাছাড়া কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরুর অনেক বৈশিষ্ট্যও অসুস্থ গরুর ক্ষেত্রে দেখা যায়।

দাঁত দেখে জানা যায় বয়স:

কোরবানির নিয়ম অনুযায়ী গরুর বয়স অন্তত ২ বছর হতে হয়। বয়স নিয়ে সংশয় থাকলে দাঁত দেখে গরুর বয়স নিশ্চিত হওয়া যায়। সাধারণত জন্মের মাস খানেক পর গরুর মুখে নিচের পাটিতে ৮ টি অস্থায়ী দাঁত গজায়। এক বছর বয়সে মাঝের দুটি দাঁত পড়ে গিয়ে স্থায়ী দাঁত গজায়। এই দাঁত দুটি অন্যান্য দাঁতের চেয়ে বেশ বড় ও দেখতে অনেকটা কোদালের মতো হয় বলে কোদাল দাঁতও বলা হয়। দুই-আড়াই বছরের মধ্যে স্থায়ী দুই দাঁতের পাশে আরও দুটি স্থায়ী দাঁত গজায়, যা অস্থায়ী দাঁতের চেয়ে আকারে বড় হয়। এভাবে চার বছরে সব অস্থায়ী দাঁত পড়ে গিয়ে আটটি স্থায়ী দাঁত গজায়। এসব দাঁত দেখে বয়স অনুমান করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *