দেশজুড়ে

কোরবানির পশু, বাড়তি খরচ-ভারতীয় গরু নিয়ে খামারিদের দুশ্চিন্তা

নিজের ডেইরি ফার্মে ৮০টি ষাড় লালন-পালন করেছেন মোত্তাকিন চৌধুরী। গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত খরচ পড়েছে তার। অন্যদিকে কোরবানি ঈদের ক্ষণ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে দেশে ভারতীয় গরুর অবৈধ প্রবেশ নিয়েও এ খামারির দুশ্চিন্তা রয়েছে।

জেলায় এবার চাহিদার তুলনায় সংখ্যায় প্রায় দশ হাজারেও বেশি কোরবানির গরু উৎপাদন হয়েছে। এরপর যদি ভারতীয় গরু প্রবেশ করে তাহলে দাম কমে গিয়ে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়তে হবে বলে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় ‘পিউর এন্ড অর্গানিক ডেইরি ফার্মের’ মালিক মোত্তাকিন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান।

তিনি বলেন, এবার গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু লাল-পালনে অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। এখন আবার ভারতীয় গরুর অবৈধ প্রবেশ নিয়ে দুশ্চিন্ত হচ্ছে। ভারতীয় গরু দেশে আসলে আমাদের পথে বসতে হবে। সেজন্য দেশে ভারতীয় গুরুর প্রবেশ ঠেকাতে প্রশাসনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার দাবি জানান এই উদ্যোক্তা।

বানিয়াচং উপজেলার কাটখাল গ্রামে ১২টি ষাড় লালন-পালনকারী লুৎফুর রহমান জানান, তার খামাড়ের সবগুলো দেশি জাতের ষাড়। প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে এগুলো লালন পালন করা হয়েছে। তাই ভাল দাম না পেলে লোকসান গুণতে হবে।

সরেজমিনে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার চানপুর গ্রামে ‘নেহার এগ্রো খামারে’ দেখা যায়, সেখানে দেড় শ’য়েরও বেশি গরু লালন-পালন করা হয়েছে। অধিকাংশই এবারের কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত।

খামারটির মালিক মজনু মিয়া ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তৌহিদ মিয়া জানান, অনেক খরচ করে গরু ও মহিষগুলো উৎপাদন করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভাল দাম না পেলে লোকসান গুণে খামারের প্রতি আগ্রহ কমে যাবে। তাই ভারতীয় গরুর অবৈধ প্রবেশ বন্ধ করা জরুরি।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুরে ‘ডেইরি পিজিও লাইভস্টক ফার্মারস’ নামের প্রতিষ্ঠানের মালিক কালা মিয়া তার খামারে ৫০টি কোরবানির গরু লালন করেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর পুত্রবধূ পারুল বেগম খামারটি পরিচালনা করেছেন। তিনি জানান, খামারে তিনজন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের মজুরির পাশাপাশি গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ বছর গত বছরের চেয়ে বেশি দামে গরু বিক্রি করতে হবে।

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, হবিগঞ্জে নিবন্ধিত ৪২৪টি ও অনিবন্ধিত খামার ৫ হাজার ৭৩৭টি পশুর খামার রয়েছে। এ বছর জেলায় কোরবানি গরুর চাহিদা ৯০ হাজার ৬৩৮টি; উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৯টি। এর মধ্যে ষাড় ২৯ হাজার ৮৯৪টি, বলদ ৫ হাজার ২৬৪টি, গাভী ১৩ হাজার ৪২টি, মহিষ ৬৫১টি, ছাগল ৩২ হাজার ৬০৮টি, ভেড়া ২১ হাজার ৫১৫টি এবং অন্যান্য ২টি পশু রয়েছে।

কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদে চুনারুঘাট ও মাধবপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় গুরু প্রবেশের শঙ্কা রয়েছে। এমনটি হলে উদ্যোক্তাদের লোকসানে পড়তে হবে। তাই প্রায় প্রত্যেকজন খামারি এ বিষয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

এদিকে সম্প্রতি চুনারুঘাট উপজেলায় অবৈধ পাচার ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা সভা করেছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। এতে উপস্থিত জেলা প্রশাসক মোছা. জিলুফা সুলতানা ও পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন জানান, ভারতীয় গরুর প্রবেশ ঠেকাতে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবাইকে সজাগ থাকার জন্যও তারা অনুরোধ জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *