ক্রিকেট বিশ্বকাপ নয়, অলিম্পিকে সোনা জেতা হবে বাংলাদেশের সেরা অর্জন: মাশরাফি
দুয়ারে কড়া নাড়ছে বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি। মিরপুর সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে ১২ দেশ নিয়ে হতে যাওয়া এই প্রতিযোগিতা উপলক্ষে সোমবার সংবাদ সম্মেলনও হয়ে গেল। সেখানে আয়োজকরা ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান জাতীয় সংসদের হুইপ মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে আসে। অনুষ্ঠানের বড় অংশ জুড়ে তাকে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। সেটা সংবাদ সম্মেলন চলাকালে কিংবা বেরিয়ে যাওয়ার সময় লবিতেও। সেখানে মাশরাফির উপলব্ধি- ক্রিকেট বাংলাদেশের প্রধান খেলা হলেও অলিম্পিকে যদি দেশের কেউ সোনার পদক পায় সেটাই হবে বড় অর্জন।
নড়াইলে খেলতেন কিনা
কাবাডি কম খেলেছি। খেলিনি তা নয়। ছোটবেলাতে নড়াইলে ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস খেলেছি। নড়াইলে কিছু দিন আগে কাবাডি খেলা হয়েছে। রাতে হয়েছে। ওখানে গিয়েছিলাম।
যখন ক্রিকেট খেলেছি। তখন অন্য খেলাগুলোকে গুরুত্ব দিয়েছি। সবাই দেশের জন্য খেলছে। ক্রিকেটে হয়তো আপনারা বেশি ফোকাস করেন। তাই আলোচনা বেশি হয়। একসময় বেশি ছিল ফুটবলে। অন্য স্পোর্টসগুলোকে বেশি ফোকাস করলে লাইমলাইটে, স্পন্সরও আসবে।
এছাড়া ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ানো কঠিন। একদিনে সম্ভব নয়। আগেও কাবাডিতে এসেছিলাম। আজও এসেছি। আমাদের জাতীয় খেলা। ভবিষ্যতে চেষ্টা করবো থাকতে।
কাবাডি কমপ্লেক্স নিয়ে
এই কাজটি দ্রুত করা সম্ভব নয়। এটাই বাস্তবতা। ঢাকার মধ্যে কমপ্লেক্স করা কঠিন। আমার সুযোগ আসলে স্থায়ী কমিটিতে বলবো। ভবিষ্যতে ঢাকার আশপাশে কমপ্লেক্সে হলে ভালো হবে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ নয়, শ্রেষ্ঠ খেলা অলিম্পিক
টোটাল স্পোর্টসে আমি সবসময় বিশ্বাসী। ক্রিকেট বিশ্বকাপ পৃথিবীর সর্বশেষ্ঠ খেলা নয়, সর্বশ্রেষ্ঠ খেলা হলো অলিম্পিক। ওখান থেকে কেউ যদি সোনার পদক নিয়ে আসে, তা হবে বাংলাদেশের জন্য সেরা অর্জন। দিন শেষে সবাই আমরা লাল-সবুজ পতাকার জন্য খেলি।
অলিম্পিকে যদি বাংলাদেশ পদক পায়- সেটা সার্বজনীন। দেখেন এখানে কথা বলছি ক্রিকেটার হিসেবে, সংসদ সদস্য হিসেবে না। এখন যদি পুরো বিশ্বে দেখেন, সারা বিশ্বে সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট অলিম্পিক। আমরা তো অলিম্পিকে হিটেই টিকছি না। এখন কয় স্টেপ পিছিয়ে আছি? এখন হিটে টিকলে যে কোনও তিনটার একটা পাওয়ার সুযোগ থাকে। এই কাজটা অনেক কঠিন। পাশের দেশ ভারত এখন ব্রোঞ্জ পাচ্ছে। রুপা পাওয়া শুরু করেছে। এমনকি সোনাও পেয়েছে। আমরা যদি এমন পদকগুলো পাওয়ার অবস্থায় যেতে পারি, তাহলে অল ওভার দ্য ওয়ার্ল্ড একটা বিগেস্ট নিউজ হবে। ক্রিকেট বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া জিতেছে, সারা পৃথিবীতে নাম হয় না। ক্রিকেট বিশ্বকাপ এত বড় কিছু না। যদিও বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতলে অনেক কিছু হবে। কিন্তু অলিম্পিক পদক জিতলে সেটার নাম সারা বিশ্বে ছড়াবে।
স্পোর্টসে বিনিয়োগ লাগবে…
সবকিছুর সমন্বয় দরকার। প্রথম ফোকাসটা- স্পোর্টস এমন একটা জিনিস যেখানে বিনিয়োগ প্রয়োজন। স্পোর্টস এমনি এমনি হবে না। এখন বিনিয়োগ করতে গেলে ফোকাস থাকতে হবে। এখানে মিডিয়া রিলেটেড, স্পন্সর রিলেটেড। সবকিছুর সমন্বয় হলে সেই গেমস ভালো করবে।
ক্রিকেটে বিসিবির স্পন্সর কত আছে দেখেন। ইনভেস্টমেন্ট যত থাকবে, তত প্লেয়ারদের সুযোগ সুবিধা বাড়বে, তত তৃণমূল থেকে প্লেয়ার বেরিয়ে আসবে।
আমাদের এই জায়গায় অন্যান্য গেমসে দুর্বলতা আছে বলে মনে হয়। কাবাডির এই একটা টুর্নামেন্টে এখানে সাড়ে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আমরা কাবাডিতে শেষ তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এ কারণে খেলাটি উঠে আসছে। আপনি যখন প্লেয়ারদের যত্ন নিবেন, যত্নটা হলো ট্রেনিং ও সুবিধাদি বাড়ানো। খেলোয়াড়দের কোনও ইনজুরি হলে সারিয়ে তুলতে ভালো ট্রিটমেন্টট হতে হবে, যেন পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারে।
আজকে কাবাডি খেলছে। বিভিন্ন জায়গায় খেলছে। কারণ তারা (খেলোয়াড়রা) চিন্তা করে সরকারি চাকরি পেতে পারে টপ লেভেলে খেললে। যদি সরকারি চাকরি বন্ধ করে দেন, তাহলে এই স্পোর্টস বন্ধ হয়ে যাবে। এই শুরুটা আপনাদের (মিডিয়া) থেকে হতে পারে।
ফেডারেশনে নেতৃত্ব সংকট আছে কিনা?
আমি সব ফেডারেশনের দায়িত্ব নিতে পারবো না। জানি না কোথাও সঙ্কট আছে কিনা। আমি খালি চোখে যেটা দেখেছি, এত মানুষ এখানে আছে। এর মানে কাবাডিতে আগ্রহ আছে। দেখা প্রয়োজন আমাদের সব খেলা যেন সমানভাবে গুরুত্ব পায় মানুষের কাছে। ক্রিকেট পাচ্ছে। আজ কাবাডি পাচ্ছে। অথচ দেখেন মেয়েরা এরই মধ্যে সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তাদের প্র্যাকটিসের অবস্থা আরও করা যেতে পারে। বেছে বেছে যদি কিছু কিছু জায়গায় কাজ করা যায় তাহলে ভালো হবে।