জাতীয়

ক্ষমতাসীন আ’লীগ এই মেয়াদেও টিকে যাবে

অর্থনৈতিক সাফল্যের কারণে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে যাবে বলে মনে করছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমটিতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিরোধী দল বিএনপি জোট এখনো দুর্বল এবং ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে তাদের তেমন

কিছু করার নেই। ক্ষমতাসীনদের গণতান্ত্রিক বিশ^াসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা গেলেও বিএনপি আমলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও খারাপ ছিল বলে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই নিবন্ধে।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় কে. ভরদ্বাজের লেখা নিবন্ধে স্বাধীনতাকাল থেকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থান, গুপ্তহত্যা, সামরিক শাসন, রাজনৈতিক বিরোধিতার ইতিহাস বর্ণনার মধ্য দিয়ে নিবন্ধের লেখক বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপট বোঝাতে চেয়েছেন।

সঞ্জয় ভরদ্বাজ লিখেছেন, ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনর্বহালের পরও সামরিকায়ন রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে থেকেছে। ওই নির্বাচনে সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। ১৯৯৬ সালে বিরোধী দল আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও নাগালের বাইরে ছিল স্থিতিশীলতা। ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অপব্যবহারের প্রশ্নে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পর এই বিধান বাতিল করে আওয়ামী লীগ। দুর্বল গণতান্ত্রিক রেকর্ডের অধিকারী বিএনপি এই পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের নিবন্ধ বলছে, প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত দশম ও এগারোতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কি অবাধ, সুষ্ঠু এবং সাংবিধানিক হয়েছে? ভোট জালিয়াতির অভিযোগ সত্ত্বেও বিরোধিতা হটিয়ে টিকে আছে ক্ষমতাসীন দল। আসলে ক্ষমতাসীন দলটি কার্যকরভাবে বিরোধীদের প্রতিহত করেছে। শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক নীতির বিজয়কে সামনে রেখে ক্ষমতাসীনরা এতে সফল হয়েছে। শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক নীতির কারণে বাংলাদেশ একটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে, সামাজিক অগ্রগতির বিভিন্ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোকে পিছনে ফেলেছে বলে দাবি করে আসছে আওয়ামী লীগ।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা এবং নির্বাচনী বিজয় নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডা হয়েছে, রাজনৈতিক লক্ষ্য ও মূল্যবোধের বিভক্তি। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি জনগণকে দুটি বিকল্পের মধ্যে একটি বেছে নিতে বাধ্য করা হয়েছে- রাজনৈতিক গণতন্ত্র নাকি অর্থনৈতিক উনয়ন, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নাকি জাতীয় সংহতি, স্বাধীনতা নাকি সমতা।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, বিরোধী দল বিএনপি এখনো ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অর্থপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসছে। তারপরও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার একটা উপায় হতে পারে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা। বিশ^শক্তি এবং বৈশি^ক প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে, তবে তাদের পদক্ষেপগুলো প্রায়ই নির্দিষ্ট কৌশলগত হিসাব-নিকাশ থেকে আসে। উদাহরণ হিসেবে লেখক বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলেছেন। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) কর্মকর্তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিকে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নীতি বলে মনে করেন। লেখক বলছেন, ১৯৭১ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আবার এমন নয়। এমনকি ২০২১ সালে মার্কিন গণতন্ত্র সম্মেলনে পাকিস্তানকে আমন্ত্রণ জানানো এবং বাংলাদেশকে বাদ রাখার প্রসঙ্গও তুলেছেন নিবন্ধের লেখক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *