চট্টগ্রাম

গরু বেশি বিক্রি কম, টেনশনে বেপারি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মনকষা ইউনিয়নের সিংনগর গ্রাম থেকে গরু নিয়ে নগরের সাগরিকা গরুহাটে এসেছেন খামারি পনির। তার সঙ্গে আছেন আরও পাঁচজন। এনেছেন ২৭টি গরু। একটি গরুর পুরো গায়ে মায়ার হাত বুলিয়ে পরিষ্কার করছেন তিনি। বিকিকিনির কথা জানতে চাইলেই, পশুখাদ্যের দাম ও হাটে মানুষের দেখা কম থাকার কথা উল্লেখ করে হতাশার কথা জানান। অন্যদিকে বাজারের ইজারাদার অবৈধ হাটের কারণে লোকসানের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিনে সাগরিকা গরুবাজার ঘুরে দেখা যায়, অলংকার মোড় এলাকায় শেষ মুহূর্তেও ট্রাকে করে গরু আনা হচ্ছে। মূল হাটের আশপাশেও কয়েকটি হাট বসেছে। তবে তারা হাটটির ইজারাদারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। মূল হাটটি বিক্রয়কর্মীদের সুবিধার জন্য কয়েকটি নামে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বড় ও আকর্ষণীয় গরু উঠেছে মামা-ভাগ্নের মাঠে। এছাড়া বহুল চাহিদার রেড চিটাগংসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৩০ হাজার গরু রাখা হয়েছে। মাঠে ইজারাদারের পক্ষে কাজ করছেন ৬ শ কর্মী। তবে গরু ও বিক্রয়কর্মীর তুলনায় ক্রেতার দেখা অনেকটাই কম।

দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন খামারিরা। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে রফিক নামে নওগাঁ থেকে আসা এক খামারি বলেন, ‘গরু বিক্রি করতে আমরা প্রতিবারই চট্টগ্রাম আসি। ঢাকার পরে বড় গরু বেশি বিক্রি হয় চট্টগ্রামে। তবে এবার হাটে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। পরিবহনে বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে। গরুর খাবারের দামও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে এবার চট্টগ্রামে এসে ক্ষতিতে পড়ছি কিনা তা ভাবছি।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) এই বড় হাটটি ইজারা নিয়েছেন সজীব এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী শিবু দাশ। তবে মাঠ পর্যায়ের সকল কাজ পরিচালনা করতে দেখা যায় তার ছেলে সজীব দাশকে। তিনি বলেন, ‘মানুষ শুরুর দিকে আসেনি। তবে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেল থেকে আসা শুরু করেছে। শেষ দিকে এমনিতেই বেচা-কেনা একটু বেশি হয়। তবে আমরা অবৈধ হাটগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনেকজনকে বলেও কোনো সমাধান পাচ্ছি না। অবৈধ হাটগুলোতে আমরা গিয়েছি। তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলতেও রাজি না।’

খবর নিয়ে জানা যায়, সাগরিকার জয়নগর মসজিদ মাঠ, একে খান মহানগর গলি, পাহাড়তলী সরাইপাড়া লোহারপোল ১১ নম্বর কমিশনার অফিসের সামনে, নিউ মনছুরাবাদ কসাই পাড়া, হালিশহর বাড়ানি ঘাটা, ফইল্ল্যাতলি বাজার, আবুল কসাইয়ের হাট ও পাঞ্জাবি লাইন কালিবাড়ি সামনের মাঠে অবৈধভাবে হাট বসিয়েছেন স্থানীয়রা।

অবৈধ হাটের বিষয়ে ইজারাদার অভিযোগ করার পর চসিক কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা জানতে সংস্থাটির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সাব্বির রাহমান সানির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তারা কেউ সাড়া দেননি।

নিউ মনছুরাবাদ কসাইপাড়া এলাকায় গিয়ে স্থানীয় সাবরি আহমেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে যারা বাইরে থেকে গরু এনে বিক্রি করছেন, তারা স্থানীয় কসাই। নিয়মিত তারা গরু বিক্রি করেন। মানুষজন তাদের কাছ থেকে বিশ্বাস করে গোসত কিনেন। এজন্য তিনিও কিছু গরু আনেন। চেনা-জানাদের কাছে বিক্রি করেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় স্থায়ী ৭২টি ও অস্থায়ী ১৭৬টি কোরবানি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরে স্থায়ী ৩টি এবং অস্থায়ী ৭টি কোরবানি পশুর হাট বসেছে। ৪৫টি হাট বসায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে ফটিকছড়ি উপজেলা। এরপর পর্যায়ক্রমে মিরসরাইয়ে ২৭টি, হাটহাজারীতে ২৩টি, সন্দ্বীপে ২০টি, লোহাগাড়া, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানে ১৬টি করে, সীতাকুণ্ডে ১৪টি, বাঁশখালীতে ১২টি, আনোয়ারায় ১১টি, বোয়ালখালীতে ১০টি, পটিয়া ও চন্দনাইশে ৯টি করে, সাতকানিয়ায় ৬টি এবং কর্ণফুলীতে ৪টি হাট বসানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *