গাড়ি ভাঙচুর, লাঠি হাতে বাধা
কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট চলছে। চার দফা দাবিতে এই ধর্মঘট ঘিরে বিভিন্ন স্থানে নৈরাজ্যের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস। লাঠিসোঁটা হাতে নগরেও বাস চলাচলে বাধা দিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এদিকে, গাড়ি চলাচল না করায় দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রামগামী সাধারণ মানুষ।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকালে নগরীর অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, এ কে খান, কর্নেল হাট, নতুন ব্রিজসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
জানা গেছে, নগরের অক্সিজেন মোড় এলাকায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ভাঙচুর করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় লাঠিসোঁটা হাতে বাসটির সামনের অংশের গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটি অক্সিজেন মোড়ে আসার সাথে সাথে আনুমানিক ১০ জন যুবক হাতে লাঠি নিয়ে বাসের সামনের গ্লাস ভাঙচুর করে। এ সময় বাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি ছিলেন সাধারণ যাত্রীও।
বায়েজিদ থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, ধর্মঘট চলাকালীন বাস চালানোর কারণে পরিবহন শ্রমিকরা চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় একটি দোতলা বাসে ভাঙচুর করে। তবে পুলিশ আসার আগে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
বহদ্দারহাটে লাঠি হাতে বাস আটকাচ্ছে কারা?
এদিকে, নগরীর বহদ্দারহাট মোড় এলাকায় কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে আসা মেট্রো প্রভাতীর তিনটি বাসের যাত্রী নামিয়ে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিক পরিচয়দানকারী কয়েকজন যুবক। এ সময় তারা বাস তিনটির সিট খুলে নিয়ে যায়।
মো. রহিম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমি বহদ্দারহাট মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। এ সময় বহদ্দাহাট টার্মিনাল থেকে আসা তিনটি মেট্রো প্রভাতীর বাস ট্রাফিকবক্সের সামনেই আটকে দেয় কয়েকজন যুবক। তাদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিলো। মেট্রো প্রভাতী বাসের চালককে তারা জিজ্ঞেস করে কেন গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। এরপর যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাস তিনটি আটকে রাখা হয়।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, ‘আমার জানামতে, ধর্মঘট আন্তঃজেলার পরিবহনের জন্য। কিন্তু বহদ্দারহাট মোড়ে আমার মেট্রো প্রভাতীর তিনটি বাস আটকে রাখা হয়েছে। বাসগুলোর সিট উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের কাছে আমি এর যথাযথ বিচার চাই।’
উপজেলা থেকে চট্টগ্রাম শহরমুখী যাত্রীদের দুর্ভোগ
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্মঘটের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আন্তজেলা বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগ। উপায় না পেয়ে জরুরি কাজে বের হওয়া অনেক যাত্রী কাভার্ড ভ্যান ও ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে শহরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ সময় মিনি পিকআপ ভ্যানে উঠেও অনেক মানুষকে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
মিরসরাই সদরের বাসিন্দা জালাল বলেন, ‘আমার মায়ের ডায়েবেটিস এর কারণে নিয়মিত শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হয়। আজ সকাল ৮টা বাজে বেরিয়েছি। কিন্তু এখন ১০টা বাজতে চললেও শহরমুখী বাস পাচ্ছি না। ধর্মঘটের বিষয়ে জানা ছিল না। এখন মাইক্রোবাস অথবা প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে যেতে হবে।’
সকালে বহদ্দারহাট নতুনব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, আমিরাবাদগামী যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাচ্ছেন না। তবে, গুটিকয়েক মাইক্রোবাস থাকায় তাতে করেই কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে শহর ছাড়ছেন তারা।
নগরের বহদ্দারহাটের কালামিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. লোকমান বলেন, ‘আমার বাড়ি লোহাগাড়ার আমিরাবাদ এলাকায়। নতুন ব্রিজ এসে দাঁড়িয়ে আছি দেড় ঘণ্টা। ধর্মঘটের কারণে বাস বন্ধ থাকায় যেতে পারছি না।’
মাইক্রোবাসে চেপেই সাতকানিয়ার উদ্দেশে রওনা দেওয়া আরিফুল হাসান বলেন, ‘ইমার্জেন্সি বাড়িতে যাওয়া লাগবে। তাই কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়েই মাইক্রোবাসে করে যাচ্ছি। উপায় তো নেই ভাই।’
তবে, ধর্মঘটের নামে এসব নৈরাজ্য হলেও এর দায়ভার নেবেন না জানিয়েছেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুছা। তিনি বলেন, ‘আমরা ধর্মঘট বললেও মূলত এটি কর্মবিরতি। পরিবহন শ্রমিকদের ওপর চলমান নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করতেই এই কর্মবিরতির আহ্বান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরও এর আওতাভুক্ত।’
এ বিষয়ে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ‘বহদ্দারহাট মোড়ে কয়েকটি গণপরিবহন আটকে রাখার খবর পেয়েছি। সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে জরুরি সভা শেষে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে চার দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয় বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।