চট্টগ্রাম

‘গায়েব’ হওয়া সোনা ‘খুঁজবে’ দুদক

চট্টগ্রামের চকবাজার ইসলামী ব্যাংকের লকার থেকে প্রায় দেড়শ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েবের ঘটনায়  থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ব্যাংকের গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী। থানা পুলিশ অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নিয়ে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠিয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে থানা থেকে দুদক চট্টগ্রাম পরিচালক বরাবরে অভিযোগটি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর।

তিনি বলেন, ‘লকার থেকে সোনা চুরির অভিযোগের বিষয়ে ভুক্তভোগী রোকেয়া আক্তার একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি দুদকের শিডিউলভুক্ত হওয়ায় থানায় মামলা রেকর্ড হচ্ছে না। আমরা অভিযোগটি আজকে (মঙ্গলবার) সকালে অফিসিয়ালি দুদকে পাঠিয়েছি।’

অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক চট্টগ্রাম অফিসের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘পরিচালক বরাবরে আজকে (মঙ্গলবার) চকবাজার থানা থেকে ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগটি ফাইলিং করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিকেলেই আমরা ঢাকা হেড অফিস বরাবরে তদন্ত অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দিবো। হেড অফিস থেকে অনুমোদিত হয়ে আসতে দুই-তিন দিনের মতো সময় লাগে। এরপরই আমরা তদন্ত শুরু করবো।’

ভুক্তভোগী গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী বলেন, ‘লকার থেকে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এস এম শফিকুল মাওলা চৌধুরী ও লকারের দায়িত্বরত অফিসার ইউনুসসহ ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মনিরুল মাউলাকে অভিযুক্ত করে গতকাল রাতে চকবাজার থানায় এজাহার করেছি। কিন্তু ওসি এজাহারটিকে জিডি হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তিনি বলেছেন এটি দুদকের শিডিউলভুক্ত। তাই তিনি অভিযোগটি দুদকে পাঠাবেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী এখন দুদক মামলা দায়ের করবে।’

লিখিত অভিযোগটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রোকেয়া বারী ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার একজন হিসাবধারী সেবা গ্রহীতা। আমার সঞ্চয়ী হিসাব নং ৮১০০/৭। ২০০৬ সাল থেকে উক্ত ব্যাংকে আমি ও আমার মেয়ে নাসিয়া মারজুকা একটি যৌথ মালিকানার লকার বরাদ্দ পেয়ে ব্যবহার করে আসছি। লকার নং–৪৪ এবং চাবি নং–৩, যা অত্র শাখার লকার হিসাব খোলার ফরমের ক্রমিক নং–৭৯ তে লিপিবদ্ধ আছে। ওই লকারে আমার ও আমার মেয়েসহ আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আনুমানিক ১৬০ ভরি স্বর্ণাংলকার গচ্ছিত ছিল। ২৯ মে দুপুরে আমি আমার কিছু স্বর্ণালংকার আনার জন্য ওই ব্যাংকে যাই এবং লকারের দায়িত্বরত অফিসার ইউনুসকে আমার লকার খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তিনি তার চাবি দিয়ে লকার কক্ষের দরজা খোলার সাথে সাথে ওই ব্যাংক অফিসার আমার নামে বরাদ্দকৃত লকারটি খোলা দেখতে পেয়ে আমাকে বললে আমি তা দেখে হতভম্ব, বিচলিত ও জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ি।

পরে জ্ঞান ফিরলে আমি লকার অনুসন্ধান করে উপলব্ধি করি যে, লকার কক্ষে প্রবেশের দরজা ও লকার উভয়ই সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু লকার খোলা এবং লকারে রক্ষিত আনুমানিক ১৬০ ভরি স্বর্ণাংলকারের মধ্যে আনুমানিক ১৪৯ ভরি স্বর্ণাংলকার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে হাতের চুড়ি ৬০ ভরি, জরোয়া সেট ২৫ ভরি, গলার সেট ১০ ভরি, গলার চেইন ২৮ ভরি, আংটি ১৫ ভরি ও কানের দুল ১১ ভরি। এ ঘটনা দেখার করার পর তা ম্যানেজার এস এম শফিকুল মাওলা চৌধুরীকে অবগত করার জন্য কর্তব্যরত লকার অফিসার ইউনুসকে অনুরোধ করি। এছাড়া ঘটনাটি তাৎক্ষণিক চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করি। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে দেখেন, লকারটি খোলা অবস্থায় রয়েছে এবং কয়েকটি অলংকার রয়েছে। যার ওজন আনুমানিক ১০/১১ ভরি। বিষয়টি ব্যাংকের ম্যানেজার, কর্তব্যরত লকার অফিসারসহ সকলকে অবহিত করা সত্ত্বেও তারা উক্ত বিষয়ে কোনো সদুত্তর প্রদান করেননি। ব্যাংকের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের যোগসাজসে একই উদ্দেশ্য পূরণকল্পে স্বর্ণালংকার চুরিসহ অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে; যা দণ্ডবিধি ১৮৬০–এর ৩৭৯, ৩৮০, ৪০৬, ৪০৯ ও ৩৪/১০৯ ধারায় শান্তিযোগ্য অপরাধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *