দেশজুড়ে

ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতি সাড়ে ৭ হাজার কোটি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে সারাদেশে বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এর আর্থিক মূল্য ৭ হাজার ৪৮১ কোটি ৮৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সমন্বিত এ ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরি করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকালে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতির সমন্বিত প্রতিবেদন প্রতিমন্ত্রী আজ বেলা ১১টায় বাসভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।

এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষয়ক্ষতির হিসাবটা আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেবো। যাতে তিনি এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেন। যাতে সব কাজগুলো প্রধানমন্ত্রী সঠিকভাবে করতে পারেন।

ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রেমাল সারাদেশে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮১৫ জন। আশ্রয়গ্রহণকারী লোকের সংখ্যা ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৯ জন। মৃত ব্যক্তির সংখ্যা ১৮ জন। আহতের সংখ্যা ২ হাজার ৫০৩ জন। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭ হাজার ৪৮১ কোটি ৮৩ লাখ ৯ হাজার ২৫২ টাকা।

হিসাব অনুযায়ী, ৩৫ হাজার ৬০২ দশমিক ৪৪ হেক্টর শস্যখেত বীজতলা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আর্থিক মূল্য ৪১০ কোটি ৭১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ৫৯ হাজার ৭৯৫ দশমিক ০৯ হেক্টর জমির শস্যখেত ও বীজতলা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা টাকার অংকে ৩০১ কোটি ৭৭ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

৪৫ হাজার ৫২১টি ঘর (পাকা, আধা-পাকা ও কাঁচা) সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতি ৭৪১ কোটি ৮৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা। অন্যদিকে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৩টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর আর্থিক ক্ষতি এক হাজার ৩০৯ কোটি ১৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ কালভার্টের সংখ্যা ৯৮টি। ৩ হাজার ১২৩ টি ব্রিজ-কালভার্ট আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ এবং কালভার্টের আর্থিক ক্ষতি ৭৮ কোটি ৪৫ লাখ ৪৩ হাজার।

পাকা, ইটের খোয়া দিয়ে নির্মিত ও কাঁচা সড়ক মিলিয়ে মোট ১০ হাজার ৪৫৯ কিলোমিটার সড়ক ঘূর্ণিঝড় রেমালে আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ১২ কোটি ৪ লাখ ৬ হাজার টাকা।

এছাড়া ২ হাজার ২৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৯১ হাজার টাকার হ্যাচারি, মৎস্য ও চিংড়ি খামারের ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ে ১৮৬ কোটি ৬০ লাখ ৩ হাজার টাকার বাধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা ও অন্যান্য কমিউনিটি স্কুলসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি ৩৯ কোটি ৫৫ লাখ ৭৪ হাজার।

ঘূর্ণিঝড়ে ২ হাজার ৩১টি মসজিদ, ৫৭১টি মন্দির এবং ১৪টি গির্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আর্থিক মূল্য ১৪ কোটি ৫৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ৬৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকার কৃষি ও অকৃষিভিত্তিক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬৫ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার টাকার বনাঞ্চল বনায়ন নার্সারি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া গভীর, অগভীর ও হস্তচালিত মিলে ৬ হাজার ৯৭৫টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা টাকার অংকে ১০ কোটি ২৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বলেও ঘূর্ণিঝড় রেমাল ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *