অর্থনীতিচট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের বাণিজ্য সম্ভাবনা বাড়াতে গবেষণা করছে জাপান

জাপানি গবেষণা সংস্থা আইডিই-জেটরো রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক সো উমেজাকি বলেছেন, ‘ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা এবং বড় বড় জাহাজ এ অঞ্চলে না আসার কারণে পিছিয়ে পড়ছে সম্ভাবনা। তাই ভৌগোলিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে বে অব বেঙ্গল অঞ্চলে মেরিটাইম বাণিজ্য সম্ভাবনাকে আরো বাড়ানো যায় সেই লক্ষ্যে গবেষণা করছে জাপান।’

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দ্যা চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডস্ট্রির কার্যালয়ে চেম্বার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রামের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গবেষণা করছে জেটরো। আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো, মিয়ানমার এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলগুলোর সাথে কানেক্টিভিটির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে। তাই চট্টগ্রামে দীর্ঘ বে অব বেঙ্গল উপকূলে রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা।’

সভায় চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলে রয়েছে প্রায় দীর্ঘ ২৫০ কিলোমিটার সমুদ্র উপকূল। এই উপকূলে রয়েছে বন্দর, জাহাজ ভাঙ্গা ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ মৎস্য আহরণ জোন। এছাড়াও বিভিন্ন ভারী শিল্প কারখানা উপকূলবর্তী এলাকায় রয়েছে। তাই উপকূলীয় এলাকায় এইসব সম্ভাবনাকে গতিশীল করতে খাতভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান করা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে সম্প্রতি পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল চালু করা হয়েছে। এছাড়াও বন্দরকে আরো সম্প্রসারণ এবং গতিশীল করতে বে-টার্মিনাল প্রকল্পে চারটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারী বে-টার্মিনালে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের সমুদ্রভিত্তিক বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক লজিস্টিক্স হাবে পরিণত হবে চট্টগ্রাম।’

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে জাপানি সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই গভীর সমুদ্র বন্দর দেশের গেইম চেঞ্জারে পরিণত হবে। কারণ এখানে ভিড়তে পারবে বড় বড় মাদার ভেসেল যা আমাদের আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বহুগুণ বাড়াবে। এই বন্দরকে আরো গতিশীল করতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর সংলগ্ন অঞ্চলে রপ্তানিভিত্তিক শিল্পাঞ্চল ও অফডক স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে।’

এ সময় চেম্বার পরিচালকবৃন্দ অঞ্জন শেখর দাশ, মাহফুজুল হক শাহ, মোহাম্মদ আকতার পারভেজ, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন ও রিয়ালেন্স শিপিং লিমিটডের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদ আলম ও বিএসআরএম গ্রুপের ম্যানেজার (লজিস্টিক্স) মো. বদরুল আলমসহ জাপানের জিআরআইপিএস (গ্রিপস) প্রফেসর তোশিহিরো কুদো বক্তব্য রাখেন।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক লজিস্টিক্স এবং বাণিজ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে অবকাঠামোগত খাতে বিনিয়োগ করছে সরকার। এই অঞ্চলে গড়ে উঠছে এশিয়ার বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর। এখানে ইতোমধ্যে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ করছে। এছাড়া জাপানি অনেক প্রতিষ্ঠানও চট্টগ্রামে বিনিয়োগ করেছে।

এ সময় তারা দেশের ক্রমবর্ধমান এই বাণিজ্য আরো গতিশীল করতে চট্টগ্রাম বন্দরসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নপূর্বক সক্ষমতা অর্জনের জন্য জাপানি সহযোগিতা কামনা করেন। বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকার চলতি বাজেটে ৩টি চামড়া শিল্প নগরী করার ঘোষণা দেন। জাপানের অটোমোবাইল সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল লেদারের সিট কভার তৈরীর জন্য প্রয়োজন প্রচুর কাঁচা চামড়া। অন্যদিকে, বাংলাদেশে রয়েছে অফুরন্ত কাঁচা চামড়ার সরবরাহ। তাই উভয়দেশের যৌথ প্রয়াসে এই দু’খাতের সমন্বয়ে ভেল্যু চেইন ইন্ট্রেগেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে অটোমোবাইল সেক্টরে রপ্তানির লক্ষ্যে জাপানি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান বক্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *