চট্টগ্রামরাজনীতি

চট্টগ্রামের বিএনপিতে আতঙ্ক

এস আলমের গাড়ি কাণ্ড

এস আলমের গাড়ি কাণ্ডের ঘটনার পর চট্টগ্রামের বিএনপিতে আতঙ্ক কাজ করছে। কেন্দ্রের একের পর এক সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামে বিএনপি নেতৃত্বের মধ্যে অনেকটা এ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাতে কমেছে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও।

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ২৯ আগস্ট রাতে একটি ওয়্যারহাউসের ভেতর থেকে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বিলাসবহুল ১৪টি দামি গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। এ ঘটনার জন্য অভিযোগের তীর উঠে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কয়েক নেতার বিরুদ্ধে। পরে কেন্দ্র থেকে ৩১ আগস্ট দক্ষিণ জেলা বিএনপির শীর্ষ তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ পাওয়া বিএনপি নেতারা হলেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, ১ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম এবং কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহবায়ক এস এম মামুন মিয়া। তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু নোটিশ জবাবের ২৪ ঘণ্টার আগেই পহেলা সেপ্টেম্বর বিলুপ্ত করা হয় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি।

একইসাথে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আবু সুফিয়ান, ১ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম এবং কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহবায়ক এস এম মামুন মিয়ার দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়। দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার পর অনেকটা মাঠে নেই বিএনপি। নেতাকর্মীর মধ্যে অনেকটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

এ কারণে অনেকে নিজেদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে গুটিয়ে রেখেছেন। আবার দলের এ অবস্থার মধ্যে জেলা কমিটির নতুন নেতৃত্বে আসতে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক এক নেতা বলেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে ৬২টি মামলার শিকার হয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আবু সুফিয়ান। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম শিকার হয়েছেন ১৭টি মামলার। তাছাড়া বিরোধীদের হামলার শিকার হয়েছেন তারা বহুবার। কিন্তু জেলা বিএনপি কমিটি বিলুপ্ত ও তাদের পদ-পদবি স্থগিতের পর এখন নতুন নেতৃত্বে আসার জন্য কেন্দ্রে তদবিরে মাঠে নেমেছেন অনেকে। তদবিরকারীদের মধ্যে অনেকেই গত ১৬ বছরে আন্দোলনের মাঠে ছিলেন না। শিকার হননি একটি মামলারও। এখন সুদিনে এসে তারা দলের ত্রাণকর্তা সাজার চেষ্টা করছেন।

এদিকে, এস আলম গাড়ি কাণ্ডের পর বিএনপির নেতাকর্মীর মধ্যে ভীতি শুধু দক্ষিণ চট্টগ্রামে নয়, নগর বিএনপিতেও তার ধাক্কা লেগেছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর সস্ত্রীক ওমরা করতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দর থেকে ফেরত আসতে হয়েছে কোতোয়ালী থানা বিএনপি সভাপতি মো. মনজুর রহমান চৌধুরীকে। অভিযোগ উঠেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে মনজুর রহমান চৌধুরীর পৈতৃক নিবাস নগরীর জামালখান চেরাগী মোড়ের সানমার স্প্রিং গার্ডেনের গাড়ির পার্কিং থেকে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধিত গাড়ি পুলিশ উদ্ধার করে। তাকে জড়িয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার বিএনপির সভাপতি মনজুর রহমান চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে গাড়িটি উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গাড়ি উদ্ধারকালে আমি বাসায় অবস্থান করলেও কোতোয়ালী থানা পুলিশ আমার সাথে কোনো প্রকারের যোগাযোগ করেনি। গাড়িটি পার্কিং এর কোন জায়গা থেকে উদ্ধার করেছে এবং কার কাছ থেকে চাবি নিয়েছে সে বিষয়েও আমি অবগত না। যে পার্কিং এ আলোচ্য গাড়িটি পাওয়া গেছে সেটাও আমার মালিকানাধীন নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ঘটনার জন্য আমাকে দায়ী করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ ঘটনায় আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *