চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের ১৬ উপজেলায় করা হচ্ছে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ, তদারকিতে ইউএনও

ঈদের দিন ঢাকামুখী পরিবহন করলে চামড়ার মান দ্রুত নষ্ট হয়। তাই কোরবানির দিন হতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যাতে মাঠ পর্যায় হতে কাঁচা চামড়া যাতে ঢাকা অভিমুখে পরিবহন না করা হয়, সেজন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

ঈদের দিন থেকে চট্টগ্রামের ১৬টি উপজেলায় স্থানীয়ভাবে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নির্দিষ্ট শেডের মধ্যে চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এসব নির্দেশনার কথা জানান।

তিনি বলেন, যারা চামড়া সংরক্ষণ করেন তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ যেন আপনারা স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে চামড়াগুলো সংরক্ষণ করেন। রাতারাতি যেন চামড়াগুলো শহরমুখী না করেন। তাড়াহুড়ো করে চামড়াগুলো শহরে নিয়ে আসা হলে চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হয়। এতে চামড়ার প্রকৃত মূল্য পাওয়া যায় না। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে চামড়া সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যায় আপনারা যোগাযোগ করবেন। তারা আপনাদের সমস্ত সহযোগিতা করবেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, চামড়া সংরক্ষণের প্রধান অনুষঙ্গ লবণ। এ লবণও পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রাখা হয়েছে। কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের প্রয়োজন হলে আপনাদের সে সার্পোটও দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

১৬ উপজেলায় কোথায় হচ্ছে চামড়া সংরক্ষণ:

এবছর চট্টগ্রামের ১৬টি উপজেলায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ চামড়া সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন স্বয়ং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর ইউনিয়নের জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া মাদরাসায় ইতোমধ্যে ১০ হাজার চামড়ার সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানে আরও ১০ হাজার চামড়া সংরক্ষণ করা যাবে। সাতকানিয়া উপজেলার ৬ স্থানে নির্দিষ্ট শেডের মাধ্যমে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে তিন স্থানে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে পদুয়ায় ২ হাজার, দরবেশহাট সাড়ে ৩ হাজার ও আধুনগর সাড়ে ৪০০ চামড়া সংরক্ষণ করা যাবে। এদিকে সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চারটা মাদরাসায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উপজেলার সমস্ত চামড়া যেখানে সংরক্ষণ করা যাবে। হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন দুই স্থানে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করছেন এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে হাটহাজারী মাদরাসায়। এছাড়াও উপজেলায়ও একটি নির্দিষ্ট শেড তৈরি করা হয়েছে। এ দুই জায়গায় ১০ হাজার চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা রযেছে। অন্যদিকে, বোয়ালখালী উপজেলার হাজীর হাট বাজারে একটি চামড়া সংরক্ষণের স্থায়ী শেড রয়েছে। সেখানে খুচরা ব্যবসায়ীদের থেকে ক্রয় করে সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া গাউছিয়া কমিটি বোয়ালখালী শাখার পক্ষ থেকে অধিকাংশ চামড়া সংগ্রহ করা হয়। সেগুলো তারা পটিয়া উপজেলার ইন্দ্রপুল গোডাউনে এবং আনোয়ারা উপজেলার কাফকো এলাকায় স্থাপিত গোডাউনে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৬ স্থানে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাদার্শায় দুইটি, বাবুনগর, এওঁচিয়া, কাঞ্চনা ও ছমদর পাড়ার একটি শেড রাখা হয়েছে। একইভাবে বাঁশখালী, আনোয়ারা, মীরসরাইয়ে উপজেলা প্রশাসনের নির্দিষ্ট শেডে চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরের নিকটের দুইটি উপজেলা কর্ণফুলি ও পটিয়ার চামড়া নগরের ট্যানারিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় বোয়ালখালী উপজেলায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের বাইরে যেনো চামড়া যেতে না পারে এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মনিটরিং করছেন।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, মাদার্শা ইউনিয়নের তেলিপাড়ায় ৪ হাজার ৫০০, মাদার্শা ইউনিয়নের বাবুনগরে ৬ হাজার, এছাড়া এওচিয়া ইউনিয়নের আলীনগরে ৩ হাজার, কাঞ্চনা ইউনিয়নের সৈয়দ পাড়ায় ৫ হাজার, সোনাকানিয়া ইউনিয়নের বাংলাবাজারে ২ হাজার, সাতকানিয়া পৌরসভার ছমদরপাড়া কওমি মাদরাসায় ১ হাজার ৫০০ চামড়ার সংরক্ষণ করা হচ্ছে। চামড়াগুলো ১০ থেকে ১৫ দিন সরক্ষণ করার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি চামড়াগুলো বিভিন্ন এতিমখানা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করছে।

এবছর সাতকানিয়া উপজেলায় গরু-ছাগল, ভেড়া, মহিষ সব মিলিয়ে ৩০ হজার পশু কোরবানি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *