চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে আলু-পেঁয়াজের সিন্ডিকেট, কমছে না দাম

চট্টগ্রামের বাজারে আলু-পেঁয়াজ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই থামছে না।মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে হুট করে আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ১২ টাকা। ৪-৫ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১৭ টাকা।

বাজারে আলু-পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরেও দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে সিন্ডিকেট ফায়দা লুটছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

নগরীর আলু-পেঁয়াজের পাইকারি বাজার খ্যাত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলুর আড়তগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত আলুর সরবরাহ। এসব আড়তে পাইকারি মূল্যে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪৩ টাকা থেকে ৪৫ টাকা দরে। অথচ মাত্র ৩ দিন আগে্ও এই আলু বিক্রি হয়েছিল কেজি ৩৩ টাকায়। তিনদিনের ব্যবধানে কেজিতে আলুর দাম বেড়েছে প্রায় ১২ টাকা। এদিকে পাইকারি মূল্যে পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৯৩-৯৫ টাকা, যা ৪-৫ দিন আগেও ছিল কেজি ৭৮-৮০ টাকা। এছাড়া নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৯৮-১০০ টাকা, ৪-৫ দিন আগে এ পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল কেজি ৮৩-৮৫ টাকা। যা কেজিতে প্রায় ১৭ টাকা বেড়েছে।

নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকা, ৩ দিনে বিক্রি হয়েছিল কেজি ৪০ টাকা দরে। পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০০ টাকা ও নতুন পেঁয়াজ কেজি ১১০ টাকা দরে। ৪-৫ দিনের ব্যবধানে পুরাতন ও নতুন পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ১৫-১৭ টাকা বেড়েছে। নগরীর কোথাও কোথাও কেজিতে প্রায় ২০ টাকা বাড়িয়েও বিক্রি করা হচ্ছে।

চকবাজার এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী মো. নাহিদ বলেন, ২-৩ দিনের মধ্যে হুট করে পাইকারি বাজারে আলু-পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমরা খুচরা ব্যবসায়ীদেরও তো স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনদিন আগে যে আলু কেজি ৩৩ টাকায় পাইকারি বাজার থেকে কিনেছি, তা আজ কিনেছি ৪৪ টাকায়। একইভাবে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

গত কয়েক মাস ধরে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আলুর বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। কখনও বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে, কখনও বা পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরেও ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এর মধ্যে আলুর পথে হাঁটতে শুরু করে পেঁয়াজও। আলুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। এনিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ ও বিভিন্ন স্তরে কঠোর সমালোচনায় নড়েচড়ে বসে সরকার। এর মধ্যে সিন্ডিকেটের বিষয়ে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন বাণিজ্যমন্ত্রীও। এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার।

পরের দিন ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সরকার নির্ধারিত দামে সাধারণ মানুষ এসব পণ্য কিনতে পারার কথা থাকলেও বাস্তবে তার কোথাও দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামে আলু-পেঁয়াজ বিক্রি করবেন না বলে ঘোষণা দেন। এরপর দাম নিয়ন্ত্রণে গত ৩০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো আলু আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এ সময় সরকার ১৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৭ হাজার ২১৫ টন আলু আমদানির অনুমতি দেয়। গত ২ নভেম্বর ভারত থেকে ৭৭ টন আমদানি করা আলু দেশে আসে। গত কয়েকদিনে আরও প্রায় ২ হাজার ২০২ টন ১৪৫ কেজি আলু আমদানি করা হয়।

আলু আমদানির পর এবার কিছুটা ধাক্কা খায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। দেশে উৎপাদিত মজুদ করা আলু কিছুটা দাম কমিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হয় ব্যবসায়ীরা। সরকারের তৎপরতায় এর মধ্যে কিছুটা কমে আসে পেঁয়াজের দামও। তবে এর মধ্যে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখা দিলে সুযোগ কাজে লাগিয়ে আবারও ফায়দা লুটতে মরিয়া হয়ে উঠে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। গত ৩-৪ দিনের ব্যবধানে কোনো কারণ ছাড়াই হুট করে চট্টগ্রামের বাজারে আলু-পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে আলু ও পেঁয়াজের আড়তদার প্রতিষ্ঠান রাহাত ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আমরা মুন্সিগঞ্জ থেকে কমিশনের ভিত্তিতে আলু আনি। কেজিতে ৫০ পয়সা কমিশন পাই। এর বেশি আমাদের হাত নাই। আলু-পেঁয়াজের দাম কেন হঠাৎ বেড়েছে তা জানি না, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।’

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা তো নিয়মিত মিটিং করছি। এখানে ডিমান্ড-সাপ্লাইয়ের ব্যাপার আছে। সাপ্লাই যখন কম এবং ডিমান্ড যখন বেশি তখন বাজারে প্রভাব ফেলবে। আমরা দেখছি বিষয়গুলো। আজও মিটিং হয়েছে।’

বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরেও কেন দাম বাড়ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা মিটিং করেছি, আমরা দেখছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *