চট্টগ্রামে ইউনিয়ন পর্যায়ে শুরু হচ্ছে ক্রীড়াযজ্ঞ
চট্টগ্রাম জেলার আওতায় রয়েছে ১৫টি উপজেলা। এই ১৫টি উপজেলায় ইউনিয়নের সংখ্যা ১৯১টি। বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিটি ইউনিয়নেই খেলাধুলা থাকে সরগরম, তবে সেটা এতদিন ছিল অপরিকল্পিত উপায়ে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশেষ দৃষ্টি দেন খেলাধুলার জন্য আবশ্যিক মাঠের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে।
একইসাথে নগরীতে যে মাঠগুলো ব্যবহারে পিছিয়ে, সেগুলোকে অধিক ব্যবহারের দিকে নজর দেন তিনি। নগর পেরিয়ে তার দৃষ্টি যায় ইউনিয়ন পর্যায়েও। ২০২৩ সালের ২ মার্চ ১৯১টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে খেলার মাঠ তৈরির ঘোষণা দেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে সে সময় প্রতি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশনা দেন মাঠ নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে। এক বছর পেরিয়ে জেলা প্রশাসকের নেয়া উদ্যোগ সফল। দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি জানান, এরইমধ্যে ১৫০টি বা তারও বেশি মাঠ প্রস্তুত। আমরা ক্রীড়াপঞ্জিকা তৈরি করেছি। সে আলোকে প্রতিটি ইউনিয়নে শুরু হয়েছে ক্রীড়াযজ্ঞ। আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট শেষে শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব মাঠ নির্মাণ করা হচ্ছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলাভিত্তিক যেসব বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেখান থেকে এসব মাঠ নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে জেলা প্রশাসক আন্তঃস্কুল ও আন্তঃকলেজ ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নিয়মিত অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে শুরু হয়ে প্রতিযোগিতাগুলো উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে এসে সম্পন্ন হবে।
এ আয়োজনের ফলে চট্টগ্রামের মূল স্তরে ফুটবলার ও ক্রিকেটার নিশ্চিতভাবেই বাড়বে। এছাড়াও ক্রীড়াপঞ্জি অনুসারে থাকবে দাবা, ভলিবল, সাঁতার, কাবাডিসহ বিভিন্ন ইভেন্ট। জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ইভেন্টগুলো আয়োজনে থাকবে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। জানা গেছে, ক্রীড়া আয়োজনে বাজেট ব্যবস্থাপনায় থাকবে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা।
আগেই বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলায় মোট ইউনিয়ন ১৯১টি। উপজেলাগুলো হচ্ছে- মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, সাতকানিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, সন্দ্বীপ, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও কর্ণফুলী। এর মধ্যে মিরসরাইয়ের ইউএনও মাহফুজা জেরিন জানান, তাদের ইউনিয়নে ১৬টির মধ্যে ১৩টি মাঠই প্রস্তুত। বাকিগুলোর কাজও শেষের পথে। আনোয়ারার ইউএনও মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, আমাদের এখানে ১১টির মধ্যে সবকটিই প্রস্তুত। একটিতে সামান্য কিছু কাজ অবশিষ্ট আছে। কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা জান্নাত জানালেন, তাদের আওতায় ৫টি ইউনিয়নের মাঠ শতভাগ প্রস্তুত।
শতভাগ মাঠ প্রস্তুত- চন্দনাইশের (ইউএনও মাহমুদা বেগম) ৮টি, পটিয়ার (ইউএনও মো. আলাউদ্দীন ভূঞা জনী) ১৭টি, ফটিকছড়ির (ইউএনও মো. মোজাম্মেল হক) ১৮টি, রাউজানের (ইউএনও অংগ্যজাই মারমা) ১৪টি, লোহাগাড়ার (ইউএনও মোহাম্মদ ইনামুল হাছান) ৯টি, সন্দ্বীপ (ইউএনও রিগ্যান চাকমা) ১৫টি। ১৪টি মাঠের মধ্যে ১৩টিই প্রস্তুত বাঁশখালীতে। ইউএনও জেসমিন আক্তার জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ক্রীড়াপঞ্জি অনুসরণ করা শুরু করেছি।
বোয়ালখালী নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, আমাদের ৯টি ইউনিয়নে ৭টি খেলার মাঠ প্রস্তুত। সেগুলোতে নিয়মিত খেলাধুলা হচ্ছে। বাকি দুটিও প্রায় শেষের পথে। রাঙ্গুনিয়া নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহেবুব জানান, ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা মিলে আমাদের ১৬টি মাঠের মধ্যে ১১টি পুরোপুরি প্রস্তুত, বাকিগুলোর কাজও শেষের পথে।
সাতকানিয়ার ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ১৭টির মধ্যে ১৪টির কাজ শতভাগ সম্পন্ন। বাকি ৩টির কাজও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান জানান, ১৪টি মাঠের মধ্যে ১০টির কাজ শেষ। কিছুদিনের মধ্যে বাকি ৪টির কাজও সমাপ্ত হবে। সীতাকুণ্ডের ইউএনও কেএম রফিকুল জানান, ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সবকটি মাঠই প্রস্তুত।
নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি উপজেলায় ক্রীড়া কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। অন্য যেকোন উপজেলার চেয়ে চন্দনাইশ কিছুটা পিছিয়ে, সেটা প্রাকৃতিক কারণে। ৮টি মাঠের সবগুলো প্রস্তুত হলেও সর্বশেষ বন্যায় সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে যে মাঠগুলো ভালো সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তঃকলেজ ফুটবল।
চট্টগ্রামের খেলাধুলার প্রসঙ্গ এলেই উচ্চারিত হয় মাঠ-সংকটের কথা। জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) ক্যালেন্ডার বর্ষে ৩৬টিরও বেশি ইভেন্ট আয়োজন করলেও সবই এম এ আজিজ স্টেডিয়াম কেন্দ্রিক। ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা হকিসহ কোন ইভেন্টের জন্যই চট্টগ্রামে বিশেষায়িত কোন ভেন্যু নেই। তাই আয়োজনের সংখ্যায় পুষ্ট হলেও মানের বিচারে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন। জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাগণ যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মাঠ প্রস্তুতে তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায়, চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন আবারও জেগে উঠবে।