চট্টগ্রামে এখনো বিক্রি হয়নি ৯০ শতাংশ চামড়া
চট্টগ্রামে এখনো অবিক্রিত রয়ে গেছে ৯০ শতাংশ কোরবানি পশুর চামড়া। চামড়া বিক্রি করতে আড়তদাররা ট্যানারি মালিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ ব্যাপারে সরকারি হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন তারা।
আড়তদারদের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে মোট চামড়া সংগ্রহ করার পরিমাণ ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৫০টি। এরমধ্যে চট্টগ্রামের রিফ ল্যাদার সংগ্রহ করেছে ২০ হাজার চামড়া। এছাড়া ঢাকা থেকে খোকন ট্যানারি ও পান্না ল্যাদার চামড়া সংগ্রহ করেছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার। বাকি চামড়াগুলো এখনো অবিক্রিত থেকে গেছে। যার কারণে ট্যানারি মালিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে তাদের।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামে আগে অনেকগুলো ট্যানারি ছিলো। এখন শুধু রিফ ল্যাদার আছে। রিফ ল্যাদার এবার চামড়া নিয়েছে ৫০ হাজার। কিন্তু আমরা সাড়ে তিন লাখের বেশি চামড়া সংগ্রহ করেছি। তাই আমাদের (আড়তদার) ঢাকার পার্টির (ট্যানারি) উপর নির্ভর করতে হয়। ঢাকার পার্টি খুঁজতে অনেকে ঢাকায় চলে গেছে। সরকারের কথামতো আমরা চামড়া কিনেছি। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে সরকারের সদয় দৃষ্টি ছাড়া আমাদের আর কি চাওয়ার থাকে?’
এ নিয়ে সংগঠনটির সহ-সভাপতি মো. আব্দুল কাদের সর্দার বলেন, ‘চট্টগ্রামে রিফ ছাড়া আর কোনো ট্যানারি নাই। রিফ এ বছর এক লাখ চামড়া নেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু তারা চট্টগ্রাম থেকে চামড়া সংগ্রহ করেছে ২০ হাজার। মুসলিম ভাইদের থেকে চামড়া কিনে বলে উনি মিথ্যা কথা বলছে। চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি চামড়া সংগ্রহ করেছে মোহাম্মদ আলী ভাই। উনি প্রায় ৩৩ হাজারের মতো চামড়া সংগ্রহ করেছে। কিন্তু যথা সময়ে বিক্রি করতে না পারলে বড় লোকসানে পড়ে যাবেন।’
চট্টগ্রামে কি পরিমাণ চামড়া বিক্রি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে এবার ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৫০টি চামড়া সংগ্রহ করেছি। এরমধ্যে রিফ ল্যাদার নিয়েছে ২০ হাজার চামড়া। এছাড়া ঢাকা থেকে খোকন ট্যানারি ও পান্না ল্যাদার চট্টগ্রাম থেকে চামড়া নিয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার। সেই হিসেবে ৯০ পার্সেন্টের (শতাংশ) বেশি চামড়া আমাদের কাছে রয়ে গেছে। সরকার যদি ট্যানারি মালিকদের একটা সুষ্ঠু বন্টন নীতি নির্দেশনা করে দেন তাহলে চামড়া শিল্প দেশের অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
এ নিয়ে চামড়া আড়তদার জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি এখন হেমায়েতপুরে। চামড়া কিনছি প্রায় ৫ হাজারের মতো। এখন এগুলোর জন্য ট্যানারি ট্যানারি দৌড়াচ্ছি। কিন্তু ট্যানারির সঙ্গে এখনও কোনো কন্টাক্ট করতে পারিনি। সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করেছে, তা ট্যানারি মালিকদের নিয়েই করেছে। এখন ট্যানারি মালিকরা চামড়া সংগ্রহের ব্যাপারে যদি সরকার কোনো নির্দেশনা দিতো তাহলে ভালো হতো। নয়তো পাট শিল্পের মতো এ চামড়া শিল্পও ধ্বংস হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি শাখার অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, ‘আমরা কোরবানি পশুর চামড়া সংগ্রহকালে কি কি করণীয় তা নিয়ে আমাদের নির্দেশনা ছিলো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চামড়াগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমরা সাতদিন চামড়া সংরক্ষণ করে রাখার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি। এটি ভালোভাবে মনিটরিংও করা হয়েছে। তবে ট্যানারির চামড়া সংগ্রহের ব্যাপারে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। ট্যানারি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যবসা করেন। এ নিয়ে তাদের এসোসিয়েশন চাইলে কাজ করতে পারেন।’
ট্যানারি মালিকদের চামড়া সংগ্রহ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে এবিএস ট্যানারির মো. ইমাম হোসাইন বলেন, ‘আড়তদারদের ট্যানারির সঙ্গে যোগাযোগ হতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। যারা ব্যবসায়ী, তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে বাজারের ও কয়েকজন ট্যানারি মালিকের সম্পর্ক থাকার কথা। তারা সেই অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ ও বিক্রি করার কথা। এরপরও কারো চামড়া নষ্ট থাকার কথা না। ঈদ শেষ হলোতো মাত্র দশ-বারো দিন হলো। আমরা মাত্র চামড়া সংগ্রহ শুরু করেছি। প্রথমে প্রত্যন্ত এলাকার চামড়াগুলো সংগ্রহ করছি। শহর অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা চামড়া যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়ে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে থাকেন। তাই আমরা প্রত্যন্ত এলাকার চামড়া সংগ্রহ শেষে শহরাঞ্চলের চামড়া সংগ্রহ করবো।’