চট্টগ্রামে তিন কেজি আলু ১০০
‘তিন কেজি আলু ১০০, তিন কেজি আলু ১০০’— এভাবে গলা হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতা রাজা আলী। চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় মঙ্গলবার বিকেলে ক্রেতা টানতে তাঁর অফুরান ডাক। ভারত থেকে আলু আমদানির খবরে পাইকারি বাজারে দাম পড়তির দিকে। তাই খুচরায় বিশেষ এই ‘অফারে’ আলু ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে নগরের রাস্তাঘাট-অলিগলিতে। তাদের দেখাদেখি একই ‘অফার’ চলছে কমবেশি কাঁচাবাজার-মুদির দোকানেও।
চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) আলু বিক্রি হয় কেজি ২৬ থেকে ২৭ টাকায়। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা দরে। খুচরা বাজারে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।
বিক্রেতা রাজা আলী বলেন, দুদিন ধরে আলুর দাম ওঠানামা করছে। গত শুক্রবার প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকায়। সোমবার ও মঙ্গলবার তা ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় নেমে এসেছে। মূলত ভারতীয় আলু আমদানির কারণেই চট্টগ্রামেও আলুর দাম কমছে।
মঙ্গলবার পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারিতে ৮ থেকে ১০ টাকা এবং খুচরা বাজারে কেজিতে ১০ থেকে ১৩ টাকা কমে আলু বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় আলু আসলে দাম আরও কমবে বলে মনে করছেন আড়তদাররা।
আড়তদাররা বলছেন, ভারতীয় আলু ঢুকলে বাজারে নতুন আলুর চাহিদা কমবে। তখন কেনাদামের অর্ধেকেও বেচা যাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আড়তদার বলেন, ‘ভারতীয় আলু আমদানির খবরে তিন-চার দিন আগে থেকে আলুর দাম ওঠানামা করছে। সেদিনের হিসাবে পাইকারিতে প্রতিকেজি আলুর দাম পড়েছিল ২৩ থেকে ২৪ টাকা। একদিন পরে সেটি আবার ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে ২৬ থেকে ২৭ বিক্রি হচ্ছে। এখন যেহেতু ভারত থেকে আলু আমদানি শুরু হয়েছে; তাহলে সামনে আলুর বর্তমান দাম আরও কমে যাবে।’
আমিনুল ইসলাম নামে এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘বস্তা হিসাব করে বিক্রি করলে প্রতিকেজি ২৬ টাকা দরে আমরা ভিন্ন ভিন্ন দাম রাখি। কেননা, কিছু বস্তা আছে ৫৬ কেজি, ৫৭ কেজি, ৫৮ কেজি, ৫৯ কেজি এবং ৬১ কেজির। এতে ৫৬ কেজির আলুর বস্তার দাম ১৪৫৬ টাকা, ১৪৮২ টাকা, ১৫০৮ টাকা, ১৫৩৪ টাকা এবং ১৫৮৬ টাকা। আলুর দাম দিনেদিনে পড়তির দিকে।’
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘ভারতীয় আলু আমদানির কারণে দেশের অন্যান্য জায়গার মতো চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও আলুর দাম কমছে। এছাড়া সব রকম পণ্যের সরবরাহ বেশি থাকায় ধীরে ধীরে দাম কমে আসছে।’
এদিকে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম কমে যাওয়ায় স্বস্তি নেমেছে ক্রেতাদের মনেও।
মাসুদুর রহমান নামে একজন ক্রেতা বলেন, ‘আলুর দাম কমে যাওয়ার কারণে আমরা অন্তত খুশি। কয়েকদিন আগেও আলু কিনতে আমরা কতবার চিন্তা করেছি। গত সপ্তাহেও এককেজি আলু কিনেছি ৪৮ টাকায়। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) সেটা ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় পাচ্ছি। সামনে আরও কমবে বলে আশা করছি।’
লুৎফর রহমান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘আলু গরিবের দামি খাবার ছিল। সেটার দাম বাড়তি হওয়ায় হাতের নাগালে ছিল না। মধ্যবিত্ত পরিবারের আলু কিনতে কত যে কষ্ট হয়েছে। বলা চলে— এতদিন চালের চেয়ে আলুর দামই বেশি ছিল। এখন অন্তত আলুর দাম কমার খবরে স্বস্তি পাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মৌসুমে চট্টগ্রামে এবার আলুর আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৯৪৯ হেক্টর জমিতে। যা আগামী দু’এক মাসের মধ্যে তোলা হবে। আর তা দিয়ে চট্টগ্রামের মানুষের কিছুটা চাহিদা মেটাবে। তবে পুরো চাহিদা মেটানোর জন্য আলু আমদানি করতেই হবে।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে ঢুকলো ৫শ’ টন আলু
গত তিন দিনে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৫০০ মেট্রিক টন আলু। সোমবারই (৫ ফেব্রুয়ারি) ২০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে। এর আগে, ৩ ফেব্রুয়ারি ১০০ মেট্রিক টন এবং ৪ ফেব্রুয়ারি ৮টি ট্রাকে ২শ’ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়।