চট্টগ্রামে নতুন মেরুকরণে পাল্টে যাচ্ছে ভোটের হিসাব
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। একের পর এক নাটকীয় ঘটনায় পাল্টে যাচ্ছে ভোটের হিসাব। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ২টি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় ভোটের হিসাবে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
১৪ দলের শরিক ও মিত্র জাতীয় পার্টিকে ৩২ আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই আসনগুলো থেকে ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনের মধ্যে চট্টগ্রামের রয়েছে ২টি। এগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) এবং চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী)। এ দুই আসন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন যথাক্রমে এম এ সালাম এবং নোমান আল মাহমুদ। আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দুটি আসনে জাতীয়পার্টির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জাতীয়পার্টির প্রার্থীরা হলেন- চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে সোলায়মান আলম শেঠ।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রার্থী ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কারণে এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। হাটহাজারীর তৃণমূল পর্যায়ে তিনি আওয়ামী লীগকে যথেষ্ট শক্তিশালী করে তোলেন। তাছাড়া চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকার কারণে এলাকায়ও ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেন ক্লিন ইমেজধারী এ রাজনীতিবিদ। হাটহাজারী আওয়ামী লীগ আশা করেছিল এবার এম এ সালামকে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী করা হবে। শুরুতে তিনি দলের মনোনয়ন পাওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবার অনেকটা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে আসনটি জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নির্বাচনী মাঠ থেকে এম এ সালাম নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে এ আসনে। হাটহাজারী আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ সম্পাদক হিসেবেও। বর্তমানে তিনি হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের সদস্য। নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূল বিএনপির মো. নাজিম উদ্দিন, সুপ্রিম পার্টির কাজী মহসীন চৌধুরী, ইসলামী ফ্রন্টের সৈয়দ মুক্তার আহমেদ, বিএনএফের আবু মোহাম্মদ সামশুদ্দিন ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ছৈয়দ হাফেজ আহমদ।
চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনটিও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানে এ আসনে ভোটের লড়াইয়ে আছেন জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, বিএনএফের প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ, সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহিবুর রহমান বুলবুল, তৃণমূল বিএনপির সন্তোষ শর্মা, কল্যাণ পার্টির মো. ইলিয়াছ, ইসলামিক ফ্রন্টের সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, এপিপি মো. কামাল পাশা ও আবদুল নবী। এ আসনে আওয়ামী লীগের নোমান আল মাহমুদ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় নতুন করে আলোচনায় এসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। চান্দগাঁও ও বোয়ালখালীতে তার প্রচুর কর্মীবাহিনী ও সমর্থক রয়েছে। তাই স্বতন্ত্র হলেও নির্বাচনে তিনি মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসবেন জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী। এ আসনে ওই দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিজেদের কোন প্রার্থী দেয়নি। কিন্তু এবার ব্যত্যয় ঘটেছে। নজিবুল বশরকে না দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে। এ আসনে তার পিতা সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারেরও ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। নিজের ও বাবার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তিনি এবার নির্বাচনে লড়ে যেতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়ব। এ উপজেলায় রয়েছে তার বিশাল কর্মী বাহিনী ও সমর্থক। নির্বাচনে লড়তে তিনি তৃণমূলে সভা-সমাবেশ ছাড়াও ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাই এ আসনে তার সাথে অন্যদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া এ আসনে আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ, ইসলামিক ফ্রন্টের মীর মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম, জাতীয় পার্টির মো. শফিউল আজম চৌধুরী, ইসলামী ফ্রন্টের মো. হামিদ উল্লাহ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান।