চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার শঙ্কা

জ্বালানি সংকটের কারণে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ চট্টগ্রামে পিডিবির সবগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র (শুধুমাত্র কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়া) গ্যাস এবং তেল নির্ভর। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে তিনটি ইউনিট বন্ধ। দুটি ইউনিট থেকে মাত্র ৮৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

এদিকে চট্টগ্রামে পিডিবির ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে রাউজান দুটি ইউনিট পুরোপরি গ্যাস নির্ভর। গ্যাস সংকটের কারণে এই দুটি ইউনিট এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে। অপরদিকে শিকলবাহা ২২৫ এবং শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি গ্যাস এবং তেল উভয় দিয়েই চলে। গ্যাস এবং তেল সংকটের কারণে প্রায় সময় শিকলবাহা এই দুটি কেন্দ্রও বন্ধ থাকে। অপরদিকে দোহাজারী ১শ’ মেগওয়াট এবং হাটহাজারী ১শ’ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি পুরোপরি তেল নির্ভর। পুরোপুরি তেল সরবরাহ না থাকলেও এই কেন্দ্র দুটিও বছরের প্রায় সময় উৎপাদন বন্ধ থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে জ্বালানি সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। এই সংকট আগামী ৪–৫ মাস আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন পিডিবির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

এদিকে চট্টগ্রামে প্রাইভেট ১৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হল তেল (ফার্নেস অয়েল) নির্ভর। বছরের অনেক সময় জ্বালানি তেল সংকটের কারণে প্রাইভেট এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেক গুলো বন্ধ থাকে। এখন শিকলবাহা তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট বন্ধ।

পিডিবি চট্টগ্রাম আঞ্চলের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামী মাসে মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট পুরোদমে উৎপাদনে আসবে। এই দুটি ইউনিট থেকে প্রতিটি ১২শ’ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) মাতারবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট পর্যন্ত ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করতে পারেনি। এই কারণে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ চট্টগ্রামে ও মদুনাঘাটে আনতে পারবে না, সরাসরি ঢাকায় চলে যাবে। এসব কারণে আগামী দিন গুলোতে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সংকট বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বলেন, এখন সব কিছু নির্ভর করছে গ্যাস এবং তেলের ওপর। আমরা যদি চাহিদা মতো গ্যাস এবং তেল পায় তাহলে সংকট হওয়ার কথা না। আমাদের কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে গ্যাসের, কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলে তেল ও ফার্নেস অয়েল দিয়ে। হাটহাজারী এবং দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি তেল দিয়ে চলে। এখন আমরা চাহিদা মতো গ্যাস পাচ্ছি না। এই কারণে রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। তবে শিকলবাহা চালু আছে।

শিকলবাহায় আজ (গতকাল মঙ্গলবার) ২০৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে বলে জানান প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী। এখন চট্টগ্রামের চাহিদা ১০১৬ মেগাওয়াট। চট্টগ্রামের চাহিদা এবং উৎপাদন সমান–সমান (১০১৬ মেগাওয়াট)। এখন শীতের কারণে বিদ্যুতের একটু কম। সামনে চাহিদা আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।

আগামী মাসে মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে উৎপাদনে আসবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এখন ৬০০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট চালু আছে। গতকাল এই ইউনিট থেকে ৪১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে বলে পিডিবি চট্টগ্রামের অপারেশন ডিভিশনের তালিকা থেকে জানা গেছে।

মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে প্রতিদিন ১০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা দরকার পড়বে। নিয়মিত এই বিপুল পরিমানের কয়লার যোগান দেওয়া এই সময়ে অনেকটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। নিয়মিত কয়লা আমদানি করা না গেলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের সংকট দেখা দিতে পারে।

অপরদিকে দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ এবং চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ও এইচটিজি এর মালিকানাধীন বাঁশখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক এস এস পাওয়ার প্লান্ট থেকে গতকাল ৩৯০ মেওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে বলে পিডিবি চট্টগ্রামের অপারেশন ডিভিশনের তালিকা থেকে জানা গেছে। পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলে কয়লার চাহিদা বেড়ে যাবে। ঠিক মতো কয়লা আমদানি করা না গেলে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের সংকট হতে পারে সামনের দিনগুলোতে (ফেরুয়ারি থেকে মে–জুন পর্যন্ত)।

এদিকে পিজিসিবি সংশ্লিষ্টরা জানান, এসএস পাওয়ার প্লান্টের বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য চট্টগ্রামের মদুনাঘাট সাবস্টেশন থেকে মেঘনা ঘাট সাবস্টেশন পর্যন্ত ২১৪ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন নির্মিত হলেও এখনো মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা থেকে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট পর্যন্ত ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ হয়নি বলে জানান প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী। ফলে আগামী মাসে মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট পুরোদমে (১২শ’ মেগাওয়াট) উৎপাদনে আসলেও এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুফল পাবে না চট্টগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *