চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নিয়ে তুমুল বিতর্ক, ক্ষোভ
চট্টগ্রাম মহানগরের আওতাধীন ৭টি থানা ও ১২টি ওয়ার্ডে কমিটি ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ। একদিনে এতোগুলো থানা-ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করায় নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও এসব কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১২ জন সিনিয়র নেতা। তারা ঘোষিত কমিটিগুলোকে অবৈধ, গঠনতন্ত্রবিরোধী ও বিভ্রান্তিকর অ্যাখ্যা দিয়ে অচিরেই পাল্টা কমিটি দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। যা নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ, চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
বুধবার (১৩ মার্চ) রাতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশিষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ স্বাক্ষরিত সাংগঠনিক প্যাডে ৭টি থানা ও ১২টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটি ঘোষণার একদিন পরেই আপত্তি জানিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিবৃতি দিয়েছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৭ জন সহ-সভাপতি, ৩ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২ জন সাংগঠনিক সম্পাদক।
বিবৃতিদাতারা হলেন— সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, সুজিত দাশ, দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, মনোয়ার জাহান মনি, মোহাম্মদ আজিজ মিসির, আব্দুর রশীদ লোকমান, মিনহাজুর আবেদূন সায়েম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন, আবদুল্লাহ আল মামুন, সরফরাজ নেওয়াজ চৌধুরী রবিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদ খান, মো. সালাউদ্দিন।
বিবৃতিতে নেতারা উল্লেখ করেছেন, ‘ফেসবুকে প্রচারিত স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের ঘোষিত কমিটি অবৈধ এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরোধী। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নিম্নে স্বাক্ষরিত চট্টগ্রাম মহানগর কার্যকরী কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ গুরুত্বের সাথে লক্ষ করেছি যে, গতকাল রাত আনুমানিক ১.৪৫ মিনিটে ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে প্রচারিত কমিটি ভাইরাল করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় কর্মীদের জানাচ্ছি, উক্ত প্রচারিত কমিটির সাথে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাথে ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। আমরা কোনো অপরাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত কমিটি গঠনই আমাদের লক্ষ্য। যা অচিরেই প্রকাশিত হবে। বিভ্রান্তিকর কমিটি প্রচারের প্রতিবাদে আগামী শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিবৃতিদাতা, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন একুশে পত্রিকাকে বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে থানা-ওয়ার্ডের সম্মেলন হওয়ার পর আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন কমিটিগুলো দেওয়া হয়। তখন কথা হয়েছিল, বর্তমান কমিটির ২০ নেতা ও সম্মেলন ঘিরে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে পদপ্রত্যাশীদের সিভি যাচাই-বাছাই করে চট্টগ্রাম অথবা ঢাকায় এক টেবিলে বসে কমিটি গঠন করার। কিন্তু নগর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক তা অমান্য করে গভীর রাতে কমিটি দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এজন্য বিবৃতি দিয়েছি।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগ কোনও নিষিদ্ধ সংগঠন নয় যে রাত প্রায় ২ টায় কমিটি ঘোষণা করতে হবে, এমনটা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ কমিটিতে বড় বড় বিএনপি নেতাদের সাথে রাজনীতি করেছে, ছবি আছে এমন মানুষদের রাখা হয়েছে। মাদক মামলায় অভিযুক্তদেরও রাখা হয়েছে। আমরা আগামী শনিবার সংবাদ সম্মেলন করবো। তারপর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবো। আমরা এ অবৈধ কমিটি ঘোষণার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এদিকে ১৩ মার্চ কমিটি ঘোষণা করা হলেও প্যাডে উল্লেখ ছিল ৩১ জানুয়ারি ২০২৪। যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এ নেতা। তিনি বলেন, ৩১ জানুয়ারি কী এমন ঐতিহাসিক দিন ছিল যে ওইদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে হলো। একটা তারিখ পরিবর্তন করা তো আহামরি কোনো ব্যাপার না। এতেই তাদের স্বেচ্ছাচারিতা প্রমাণিত।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আপনারা জানেন, অনেক সহযোগী সংগঠনও সম্মেলন পর্যন্ত করতে পারেনি। সেখানে আমরা ১১ মাস আগে বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডে সম্মেলন করেছি। যথাযথভাবে সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে এসব কমিটি দেওয়া হয়েছে।’