চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম ওয়াসা স্যুয়ারেজ: প্রথম প্রকল্পের ৪৫% কাজ শেষ, নতুন হচ্ছে আরো ৫ প্রকল্প

চট্টগ্রাম ওয়াসায় স্যুয়ারেজের আরো ৫টি ক্যাচমেন্টের কাজ শুরু হচ্ছে। যার জন্য ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। এর আগে গ্রহণ করা স্যুয়ারেজের প্রথম ক্যাচমেন্টের জন্য ব্যয় হচ্ছে আরো তিন হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। সবগুলো প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার ছাড়াও বিদেশি অর্থায়নে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

এদিকে নগরীতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ২০২৬ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াসার। একই সময়ে ওয়াসা স্যুয়ারেজ নিয়ে আরো ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। প্রকল্পগুলোর ডিপিপি তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে এগুলো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। গৃহিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে দুটি জাপানের জাইকা, একটি দক্ষিণ কোরিয়ার দাতা সংস্থা ইডিসিএফ, একটি ফ্রান্সের এএফডি এবং অপর একটি জাপানের মারুবিনি কর্পোরেশনের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছে ওয়াসার সূত্র।

সূত্র জানায়, ‘ওয়াসার মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় পুরো শহরকে ৬টি ক্যাচমেন্টে ভাগ করা হয়। প্রণীত প্ল্যানের সুপারিশ অনুযায়ী জোন-১ এর জন্য প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওয়াসা। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

প্রকল্পের অধীনে পয়ঃশোধনাগার, ফিক্যাল স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ এবং পয়ঃপাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। একইসাথে চলছে গ্রাহক পর্যায়ে পয়ঃসংযোগ লাইন প্রদানের কাজও। দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার সংস্থা তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পের কাজ করছে। বাংলাদেশ সরকার ও ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে তিন হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর নগরীর ২০ লাখ মানুষ স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (সিওয়াসা) এর আগে নগরীতে শুধুমাত্র পানি সরবরাহ করেছে। স্যুয়ারেজ বা পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারেনি। এটিই হচ্ছে ওয়াসার গৃহিত প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্প। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘স্যুয়ারেজ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে নগরীর ২১টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে পয়ঃনিষ্কাষণ সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। এজন্য পয়ঃসংযোগের কাজ শুরু হয়েছে। একইসাথে নগরীর অবশিষ্ট ৫টি ক্যাচমেন্ট এলাকায় স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য ডিপিপি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদনের পর পুরো শহরে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

এদিকে ওয়াসার স্যুয়ারেজের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ক্যাচমেন্ট দুই ও চার। নগরীর কালুরঘাট ও বাকলিয়া এলাকায় প্রকল্পের মূল স্থাপনা তৈরি হবে। বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের জাইকার যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। নগরীর পাহাড়তলী, লালখানবাজার, বাগমনিরাম, জামালখান, চকবাজার, চান্দগাঁও, শুলকবহর ও ষোলশহর এলাকার বাসিন্দারা এ প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

স্যুয়ারেজের জন্য তিন নম্বর ক্যাচমেন্ট নিয়ে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করেছে ওয়াসা। এটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১, ২, ৩, ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড এবং হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলাকে নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশ ও কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের ইডিসিএফ অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।

স্যুয়ারেজের ক্যাচমেন্ট- ৫ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে নগরীর খুলশী, উত্তর কাট্টলীসহ আশেপাশে এলাকায়। বাংলাদেশ সরকার ও ফ্রান্সের ডেভলাপমেন্ট এজেন্সির (এএফডি) যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। এটিও এখন পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

স্যুয়ারেজের ক্যাচমেন্ট-৬ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে নগরীর পতেঙ্গা এলাকায়। বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের মারুবিনি কনস্টাক্টশন কোম্পানির যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। এটিও এখন পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

জানতে চাইলে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ‘স্যুয়ারেজ প্রকল্প’। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তাছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের পর স্যুয়ারেজ নিয়ে আরো ৫টি ক্যাচমেন্টের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *