চট্টগ্রামরাজনীতি

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা : নতুন সংকটে আওয়ামী লীগ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল-বিভেদ চরম আকার ধারণ করেছে। নির্বাচন পরবর্তী বিভিন্ন উপজেলায় সংঘাত-সংঘর্ষ ও বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা।

গতকাল ৬ দফা দিবস পালন করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগ। বোয়ালখালীতেও নির্বাচনী দ্ব›দ্ব ফুটে উঠেছে আলোচনা সভায়। অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে পটিয়াসহ দক্ষিণের বিভিন্ন উপজেলায় দিবসটি উপলক্ষে কোনো সভার আয়োজন করা হয়নি বলে জানা যায়।

উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম দক্ষিণের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালীতে দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। দলীয় সমন্বয়হীন ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি, কৃষক লীগ সভাপতি ও মহিলা লীগের সভাপতিসহ দলের ৫ শীর্ষ নেতার চরম পরাজয় ঘটে। তা নিয়ে দলীয় কোন্দল চরম আকার রূপ নেয়।

গতকাল ৬ দফা দিবসের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের ভরাডুবি ও দলের কিছু নেতার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন দলের শীর্ষ নেতারা। এ নিয়ে সভার পর নেতাদের মধ্যে বাদানুবাদ সৃষ্টি হয়। তবে তৃণমূলের ব্যাপক উপস্থিতি থাকায় নেতায় নেতায় বিরোধ বেশি দূর এগোয়নি।

বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজা পূর্বকোণকে বলেন, ‘বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সারাদেশে নজির সৃষ্টি করেছে। দলের গুটিকয়েক নেতা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে একাট্টা হয়ে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির ষড়যন্ত্র করেছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ করেছে আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগের নামধারী এসব ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বয়কট করার জন্য তৃণমূল ও দলীয় নেতাকর্মীরা দাবি করেছে।’

দলীয় কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আনোয়ারা উপজেলায়। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আনোয়ারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে। সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও বর্তমান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানকে ঘিরে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নানও আহত হয়েছেন। তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন উপজেলায় দলের মধ্যে বিভাজন ও সংকট চরম রূপ নিয়েছে। নিজেদের মধ্যে হানাহানি, অন্তঃকলহ ও নির্বাচনের সাময়িক ভুল বোঝাবুঝি পরিহার করে সকলকে শান্তি-সহাবস্থান বজায় রাখার অনুরোধ জানান তিনি। দ্বন্দ্ব ও বিভাজন কখনো দলের জন্য শুভ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের চিহ্নিত করে দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে ভোটার বাড়ানো ও অংশগ্রহণমূলক করতে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেয়নি সরকারি দল আওয়ামী লীগ। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহিত করেছিল ক্ষমতাসীন দল। এতে দীর্ঘ সময় পর ভোটার উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছিল জাতীয় নির্বাচনে। সেই কৌশল কাজে লাগিয়ে উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী না দিয়ে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেয় দলটি।

বোয়ালখালীতে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ঘরানার প্রার্থীদের চরম ভরাডুবি হয়। এই ফলাফল বিপর্যয়ে বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের গুটিকয়েক নেতাকর্মীদের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজা। গতকাল দলীয় সভায় ক্ষোভ ঝাড়েন তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দলীয় শীর্ষ নেতারা। দলের ভেতরের ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে আওয়ামী লীগকে শৃঙ্খলায় ফেরানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম বাবুল বলেন, ‘স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সারাদেশ যুগপৎ আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু বোয়ালখালীতে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে যুগপৎভাবে আমরা আন্দোলন করিনি। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে একাট্টা হয়ে দলের কিছু নেতাকর্মী ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের চরম বিপর্যয়ে ফেলে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে হেয়প্রতিপন্ন ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সেই সংকট কাটিয়ে দলকে শৃঙ্খলায় ফেরানো ও আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি।’

চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে ব্যবসায়ী জসিম উদ্দীন আহমেদের কাছে পরাজিত হন উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ চৌধুরী। পটিয়ায় নগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলমের কাছে পরাজিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র হারুনুর রশিদ। এসব উপজেলায় দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *