চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীর কোরবানির হাটে শেষ মুহূর্তে বেচাকেনার ধুম

শেষ মুহূর্তে জমজমাট হয়ে উঠেছে নগরীর কোরবানি পশুর বাজার। শনিবার বিকাল থেকেই নগরীর পশুর হাটগুলোতে ক্রেতাদের ঢল নামে। একই সঙ্গে ট্রাকে ট্রাকে গরু আসে দেশের নানা প্রান্ত থেকেও। নগরীর বড় তিন পশুর বাজার- সাগরিকা, বিবিরহাট, নুর নগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে- গত কয়েক দিনের তুলনায় গরুর দাম কিছুটা পড়তির দিকে। কোরবান ঘনিয়ে আসায় শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ক্রেতাদের গরু বিক্রি করতে ব্যাপারিদের চেষ্টাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

নুর নগর হাউজিং এস্টেট বাজার :

গতকাল নগরীর নুর নগর হাউজিং এস্টেট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাজশাহী, ফরিদপুর, মাদারিপুর ও নাটোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকেই সেখানে কোরবানির পশু আনা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকেও খামারিরা গরু নিয়ে এসেছেন নগরীর অন্যতম বড় এই পশুর বাজারে। এই বাজারে নগরীর বাকলিয়া, চান্দগাঁও, চকবাজার এলাকার ক্রেতাই বেশি। শনিবার বিকালে দেখা যায়- নুর নগর হাউজিং বাজারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারিরা বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ক্রেতারাও দর কষাকষিতে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে শেষ মুহূর্তে জমজমাট হয়ে উঠেছে এই বাজার।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে- গরুর দাম কিছুটা পড়তির দিকে। গত শুক্রবারের তুলনায় গতকাল প্রায় প্রতিটি গরুতেই দাম ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কম হাঁকাচ্ছেন ব্যাপারিরা। বিশেষ করে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ক্রেতাদের গরু বিক্রি করতে ব্যাপারিদের চেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো।

নুর নগর হাউজিং এস্টেট বাজারে ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. আরমান হোসেন বলেন, বাজার শুরু হওয়ার পর থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার গরু বিক্রি হয়েছে। বাজারে প্রচুর গরু রয়েছে। গরুর কোনো ঘাটতি হবে না। তাছাড়া, ট্রাকে ট্রাকে করে প্রতিনিয়ত গরু ঢুকছে বাজারে।

সাগরিকা গরুর বাজার :

গতকাল সকাল থেকেই জমজমাট বেচাকেনা শুরু হয় সাগরিকা গরুর বাজারে। সন্ধ্যায়ও ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু প্রবেশ করে এই বাজারে। তবে এরপরেও গতবছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তবে ন্যায্য দামের চেয়ে কম দামেই গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে দাবি করেন সাগরিকা বাজারের ব্যাপারিরা।

শনিবার এই বাজারে গরু কিনতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, বিবিরহাট, নুর নগর ও বিভিন্ন ফার্মে গিয়ে গরু দেখেছি। তবে দরদাম ও পছন্দ না হওয়ায় নিতে পারিনি। অবশেষে সাগরিকা থেকে পছন্দ করে একটি গরু নিয়েছি। আমার মনে হচ্ছে গত বছরের তুলনায় গরুর দাম কিছুটা বেশি।

শুক্রবার এই বাজারে ভালো গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানান, ফরিদপুর থেকে গরু নিয়ে আসা রমজান মোল্লা। তিনি বলেন, আমরা ১২ জন মিলে ৩৫টি গরু এনেছি। ইতোমধ্যে ২৩টি বিক্রি হয়েছে। গত বছরও আমরা ৩০টি গরু এনেছি। সবগুলোই বিক্রি হয়েছিল। এবছরও সবগুলো গরু বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

বিবির হাট বাজার :

শনিবার বিকালে নগরীর বিবিরহাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে কিছুক্ষণ পর পর বাজারের সামনে এসে থামছে গরুভর্তি ট্রাক। বাজারের পাশে নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে একের পর এক নামিয়ে গরুগুলোকে সারিবদ্ধভাবে সাজানো হচ্ছে। একই সাথে ক্রেতার পাশাপাশি ভিড় জমাচ্ছে দর্শনার্থীরাও। প্রচুর গরু থাকায় দামও কিছুটা পড়তির দিকে এই বাজারে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা ব্যাপারি রাহুল বলেন, এবারের বাজারে তেমন দাম উঠছে না। প্রায় ৭শ কিলোমিটার দূর থেকে একটু বেশি লাভের আশায় চট্টগ্রামের মাটিতে অনেক টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে গরু নিয়ে এসেছি। নিজেরা থাকছি-খাচ্ছি, জায়গার ভাড়া দিয়েছি। এবারও আমাদের লোকসান হবে মনে হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে এক থেকে দেড় মণ ওজনের গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, দুই থেকে চার মণ ওজনের গরুর দাম দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা, পাঁচ মণ ওজনের গরুর দাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা, ১০ মণ বা তার বেশি ওজনের গরুর দাম চার থেকে ছয় লাখ টাকায় মিলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *