চমেকের সাবেক শিক্ষার্থীর নাম ভাঙিয়ে চলছিল চিকিৎসা
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ২০০৫ সেশনের শিক্ষার্থী ডা. সাদিয়া চৌধুরী শিম্মির নাম ভাঙিয়ে ‘চিকিৎসা’ দিয়ে আসা সাদিয়া আক্তার (৪৩) নামের এক নারী গ্রেপ্তার হয়েছেন; সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি।
স্থানীয়দের কাছে সাদিয়া আক্তার নিজেকে একজন মেডিসিন, গাইনি, মা, শিশু ও বন্ধ্যত্ব রোগের চিকিৎসক পরিচয় দিতেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সি-সেকশন অস্ত্রোপচারও করাতেন তিনি। অনুমতি না থাকলেও সেখানে অস্ত্রোপচার করা হচ্ছিল।
গত ৫ মার্চ একজন প্রসূতি নারীর সি-সেকশন করতে গিয়ে অবস্থা খারাপ হলে তড়িঘড়ি করে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে সেই প্রসূতি মা ও নবজাতককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালান গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিকের নেতৃত্বে একটি দল। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহা, ডা. সাবিনা আক্তার, থানার এসআই এমরুল কবিরসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নানা অনিয়ম সামনে এলেও সাদিয়া আক্তারের কথাবার্তায় তার চিকিৎসক পরিচয় নিয়ে সন্দেহ হয় অভিযান চালানো দলের। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহার তৎপরতায় জানা যায়, সাদিয়া মূলত আরেকজন চিকিৎসকের পরিচয় ব্যবহার করে সেখানে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিলেন।
শুরুর দিকে অস্বীকার করলেও ধীরে ধীরে নিজের পরিচয় জানায় সাদিয়া আক্তার। তিনি ঢাকার মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়া এলাকার মুহিত খানের মেয়ে।
একপর্যায়ে সাদিয়া স্বীকার করেন তিনি আরেকজন চিকিৎসকের (ডা. সাদিয়া চৌধুরী; যিনি বর্তমানে আছেন মালয়েশিয়ায়। দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ সায়েন্স বিভাগের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।) বিএমডিসি সনদ ব্যবহার করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন। এমনকি অস্ত্রোপচারও করে আসছিলেন।
এ সময় গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত সাদিয়া আক্তারকে আটক করেন। একইসঙ্গে সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৫০ হাজার ও ফার্মেসিকে ৫০ হাজারসহ মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করে। পরে বিভিন্ন অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার কারণে সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সিলগালা করা হয়।
গ্রেপ্তার সাদিয়া আক্তারের বিরুদ্ধে বিএমডিসি অ্যাক্ট ২০১০ এর ২২ ও ২৯ ধারা অনুযায়ী নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। বুধবার (১৩ মার্চ) তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহা বলেন, অভিযানে আমাদের কাছে সন্দেহ হলে সেখানে থাকা সাদিয়া আক্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। তিনি আরেকজনের বিএমডিসি সনদ ব্যবহার করে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে যাচ্ছিলেন। পরে তাকে স্থানীয় থানায় আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিএমডিসি অ্যাক্ট ২০১০ এর ২২ ও ২৯ ধারা অনুযায়ী নিয়মিত মামলা দেওয়া হয়। যার ন্যুনতম সাজা তিন বছরের জেল। এছাড়া ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এর ধারা ৫১, ৫২ অনুযায়ী সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করি। সেটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নামে নানা ধরনের অপকর্ম হচ্ছিল সোনিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহা বিষয়টি জানানোর পরে সেখানে অভিযান চালাই। অভিযানের সময় জানতে পারি আরেকজন চিকিৎসকের পরিচয় ব্যবহার করে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন সাদিয়া আক্তার। পরবর্তীতে আমরা তাকে আটক করি।