চট্টগ্রাম

চার অসহায় মেয়ের স্বপ্ন পূরণের সারথি আ জ ম নাছির

পরপর চার জন মেয়ে সন্তান জন্ম নেওয়ায় ১২ বছর আগে পুরো পরিবার ছেড়ে গিয়েছিলেন বাবা মুজিবুর রহমান। এরপর ৪ কন্যাকে নিয়ে কখনও পরের বাড়িতে কাজ, কখনও গার্মেন্টসে চাকরি করে বহুকষ্টে দিনাতিপাত করেছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার গুমানমর্দ্দন গ্রামের বাসিন্দা মা সেলিনা আকতার।

২০২২ সালে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছিলেন সেলিনা আকতার। সেসময় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার দুঃখ-দুর্দশা ও জীবন সংগ্রামের কথা বলেছিলেন তিনি। সেদিন সেলিনা আক্তারের এই অসহায়ত্ব ও জীবন যুদ্ধের বিষয়টি স্পর্শ করে আ জ ম নাছিরকে। সেলিনার এসব কথা শুনে উপস্থিত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের চোখে পানি চলে আসে। সেলিনার সংসারজীবনে ঘটা নানা দুঃখ-কষ্টের কথা শুনে তার চার মেয়ের পড়াশোনার খরচ সরবরাহ ও আজীবন পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।

তিন বছর আগে সেলিনা আকতারকে দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি এখনও অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলছেন আ জ ম নাছির। নিয়মিত খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় পরপর পাঠিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষাসামগ্রী ও যাবতীয় খরচের টাকা।

আজীবন সেলিনার পরিবারের পাশে থাকার সেই প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে আ জ ম নাছিরের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল যায় হাটহাজারী উপজেলার সরকার হাট গুমানমর্দ্দন গ্রামে অবস্থিত সেলিনা আকতারের বাড়িতে।

প্রতিনিধি দলটি সেলিনার মেয়েদের বই-খাতা, কলম-পেন্সিল, স্কুল ব্যাগ-ড্রেস, পরীক্ষা ফি ও আনুষঙ্গিক খরচসহ চলতি বছরের মাদ্রাসার পুরো বেতনসহ যাবতীয় খরচের টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে দেয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনিছুর রহমান চৌধুরী, গুমানমর্দ্দন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান।

এসময় তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় ভূমিসহ ঘর পেয়েছিলেন সেলিনা আকতারসহ তার চার মেয়ে। পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন সেলিনা আকতারের চার মেয়েকে দেওয়া ওয়াদাও অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করে চলেছেন। গত ৩ বছর ধরে গণমানুষের নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন সেলিনা আকতার ও তার চার মেয়েকে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

বাবা হারানো চার মেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ায় আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেলিনা আক্তার বলেন, তিন বছর আগে আমার অসহায়-বঞ্চিত মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া পর্যন্ত পড়াশোনার দায়িত্ব দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সাহেব। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও চার মেয়েকে দেওয়া ওয়াদা অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করেছে আ জ ম নাছির উদ্দীন সাহেব। শিক্ষাসামগ্রীসহ যাবতীয় খরচের টাকা দিয়েছেন। আমরা মনে করেছিলাম, প্রথমবার সহযোগিতা করে হয়তো দ্বিতীয়বার আর করবে না। কিন্তু না, তিনি প্রতিবছরই করে যাচ্ছেন। তিনি আমাদের পরিবারের পাশে না দাঁড়ালে আমার মেয়েরা পড়াশোনা করতে পারতো না। আমার বড় মেয়ে এখন এইচএসসি দিয়েছে, মেঝ হয়ে সামনে দেবে। আমি আ জ ম নাছির উদ্দীন সাহেবের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।

এ সময় সেলিনা আকতার আরও স্বচ্ছলভাবে চলার জন্য আ জ ম নাছিরের কাছে নিজের কিংবা তার বড় মেয়ের জন্য কর্মসংস্থানের অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘কারও কথায় না, আমি স্বপ্রণোদিত হয়ে এ দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, তা যথাযথ পালন করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আসলে মানুষ তো মানুষের জন্য। আর্থিক অবস্থার তারতম্যের কারণে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করে। আর প্রত্যেকটা মানুষের খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটা হলো একটা জন্মগত অধিকার। আর্থিক অক্ষমতার কারণে এই অধিকারটা পুরোপুরি রক্ষা করা হয় না। মানুষ অনাহারে থাকবে, অল্পহারে থাকবে, গৃহহীন অবস্থায় থাকবে, ভূমিহীন অবস্থায় থাকবে তারপর জীবন-জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবে, এটা অমানবিক ব্যাপার, যেটা মেনে নেওয়াটা অত্যন্ত কঠিন।’

দুস্থ-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, ‘সত্যিকারার্থে বঙ্গবন্ধু তো আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। আমি ওনার একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে ওনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানুষের জন্য রাজনীতি করি। আমার উছিলায় যদি চারটা মেয়ে জীবনে স্বস্তি পায় তাহলে আমি মনে করি এটা আমাদের সবার জন্য কল্যাণকর। পড়াশোনা করানো গেলে তাদের পরবর্তী প্রজন্মও শিক্ষার আলো পাবে। সমাজ-দেশ উপকৃত হবে। সমাজের বিত্তবানরা যদি স্ব স্ব এলাকায় এভাবে এগিয়ে আসে তাহলে আমাদের সমাজের মধ্যে একটা আমূল পরিবর্তন চলে আসবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *