চট্টগ্রামরাজনীতি

ছাত্রলীগের দক্ষিণের কমিটি প্রস্তুত, নগরের তোড়জোড়

দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির রূপরেখা অনেকটা প্রস্তুত করা হয়েছে। পাঁচ মাস পর আসছে নতুন কমিটি। গতকাল সোমবার ঢাকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কমিটির পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সভায় আগামী কমিটির পদপ্রার্থীদের প্রতি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার তোড়জোড় চলছে। গতকাল দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় ও নগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। পাঁচজনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নগর ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানায় বৈঠক সূত্র। তবে কী ধরনের কমিটি আসছে তা নিয়ে মুখ খোলেননি ছাত্রলীগের নেতারা।

২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর এসএম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর ২০২০ সালের ৪ মার্চ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। নানা অভিযোগের কারণে গত ২৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর থেকে কমিটি ছাড়াই চলছে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতি। নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ১৪ অক্টোবর পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে বায়োডাটা সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় কমিটি। সাতদিনে প্রায় ৬শ নেতাকর্মী বায়োডাটা জমা দেন।

গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যালয়ে নতুন কমিটির পদপ্রত্যাশীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

সভায় উপস্থিত অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয় পূর্বকোণের। এছাড়া নগর ছাত্রলীগের আরও অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানালেন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের নতুন কমিটির রূপরেখা অনেকটা প্রস্তুত করা হয়েছে। সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা কমিটি ঘোষণার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেননি। তবে আগামী কমিটির কার্যক্রমের বিষয়ে নানা দিকনির্দেশনা দেন। জেলা ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন করে স্মার্ট ছাত্ররাজনীতির বার্তা দেন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে এই মতবিনিময় সভা। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করে কমিটি ঘোষণা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, নতুন কমিটির রূপরেখা অনেকটা প্রস্তুত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের পছন্দের প্রার্থীদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শীর্ষ দুই পদে আসছে সাতকানিয়া ও আনোয়ারার দুই প্রার্থী। চলতি সপ্তাহের মধ্যে নতুন কমিটি ঘোষণার আশা করছেন পদপ্রত্যাশীরা।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, প্রায় ৬শ জন বায়োডাটা জমা দিয়েছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও অন্যান্য পদে আসতে সিভি জমা দিয়েছেন অনেকেই। বায়োডাটা জমা দেওয়ার পর থেকেই পদপ্রত্যাশীরা জেলা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিচ্ছেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছেও ধর্ণা দিচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের পাঁচজন জানান, মতবিনিময় সভাকে ঘিরে ৪-৫ দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বর্তমান ও সাবেক নেতা ছাড়াও আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামের নেতা, সংসদ সদস্যের কাছে ঘুরছেন পদপ্রত্যাশীরা।

নগর ছাত্রলীগের তোড়জোড় :

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদের কমিটি পার করেছে এক দশক। বর্তমানে নতুন কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে চলছে জোর তদবির। এছাড়াও কমিটিতে আসতে চেষ্টা করছেন ১২ শতাধিক ছাত্র। নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘিরে বিভিন্ন কলেজভিত্তিক গ্রুপ-উপগ্রুপের নেতারা কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করে চলেছেন।

গতকাল দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এবং নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।

নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর পূর্বকোণকে বলেন, মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবে দেখা করেছি। নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের জানিয়েছি।

ইমু ও জাকারিয়া বলেন, ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের বায়োডাটা জমা নেওয়া হচ্ছে। ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জমা নেওয়া হবে। বায়োডাটাগুলো যাচাই-বাছাই করেই দ্রুত কমিটি ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

নগর ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, ইসলামিয়া কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্রলীগের নেতারা অতীতের কমিটিতে প্রাধান্য পেয়েছেন। এবার চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের নেতাকর্মীরাও কমিটির শীর্ষ পদ-পদবি বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন নুরুল আজিম রনি। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *