চট্টগ্রাম

ছুটি না পেয়ে কারখানাতেই অসুস্থ পোশাককর্মীর মৃত্যু!

চট্টগ্রামে কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় কর্মরত অবস্থায় হাজেরা খাতুন নামে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৪ জুন) নগরের কর্নেল হাট এলাকার ভ্যানগার্ড গামেন্টস লিমিটেড পোশাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন তার সহকর্মীরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

হাজেরা খাতুন নগরের বন্দর থানার গোসাইলডাঙ্গার বাসিন্দা। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর গ্রামে। তবে তিনি ওই কারখানার কোন পদে কর্মরত ছিলেন তা জানা যায়নি।

নগরের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নেওয়ার আগেই ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে পুলিশ বলছে, কারখানায় নয়, ছুটি দেওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শ্রমিক মারা গেছেন। যদিও মারা যাওয়া ওই শ্রমিককে পোশাক কারখানা নাকি বাসা থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে তা জানা যায়নি।

অসুস্থ শ্রমিককে হাসপাতালে নেওয়া আরেক শ্রমিকের বরাত দিয়ে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেপায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে ওই নারী অসুস্থ হওয়ার পর তাকে বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপর তার ছেলেকে ডেকে আনা হয়। আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে ছেলেসহ সিএনজি করে তাকে আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কারখানায় কর্মরত আরেক পোশাকশ্রমিক বলেন, ‘আমাদের এক ওয়ার্কার অসুস্থ হয়ে গেলে ইনচার্জের কাছে তিনবার ছুটি চেয়েও পায়নি। পরে বেশি খারাপ অবস্থা হয়ে গেলে অফিসে মারা যায়।’

ওই পোশাকশ্রমিক হাসপাতালে মারা গেছেন দাবি করে নগর পুলিশের পাহাড়তলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. মঈনুর রহমান বলেন, ‘মারা গেছে সঠিক। কিন্তু কারখানায় মারা যাওয়ার তথ্যটি ভুল। ওই শ্রমিক সাত-আট দিন ধরে অনুপস্থিত ছিলেন। অফিসে না আসার কারণ জানতে চাইলে ওই নারী ইনচার্জকে বলেন তিনি অসুস্থ। কাজ করা অবস্থায় আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সিএনজিতে করে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাসায় যাওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার অসুস্থতাবোধ করলে ওই নারী মা ও শিশু হাসপাতালে চলে যায়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।’

এদিকে, ওই নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নূরুল হক বলেন, ‘ওই নারীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে বিষয়টি পুলিশ দেখছে। আর মৃত অবস্থায় আনা হলে ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর কারণ বলা যাবে না।’

এ বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবি করে ভ্যানগার্ড গামেন্টস লিমিটেডের পরিচালক নাফিদ নবী বলেন, ‘আমার কাছে এ ধরনের কোনো খবর নেই। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। খবর নিয়ে দেখছি।’

পরিবারের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে পাহাড়তলী থানার ওসি কেপায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ‘আমরা লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। পরিবারের অভিযোগ সাপেক্ষে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *