কক্সবাজার

জটিলতা কাটিয়ে সফল ‘তেল খালাস’

গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত তেলবাহী মাদার ভেসেল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল খালাস কাযক্রম অবশেষে সফল হলো। দু’দফা জটিলতার পর পরীক্ষামূলক এই কার্যক্রম সফল হওয়ায় জ্বালানির নতুন দিনের সূচনা বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি জানায়, বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে সৌদি আরব থেকে আমদানি করা অপরিশোধিত তেল কালারমারছড়ায় স্থাপিত ট্যাংকে স্টোরেজ শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রমে টাগবোটসহ নানা সহায়তা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে বাস্তবায়িত সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পটি গেল ১৪ নভেম্বর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পরীক্ষামূলক পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানায়, তেল খালাস কাযক্রম সফল করতে সৌদি আরব থেকে প্রায় ৮২ হাজার মেট্রিক অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়। তেলবাহী মাদার ভেসেলটি বুধবার রাতে গভীর সাগরের মুরিং পয়েন্টে এসে পৌঁছে। এরপর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে পাম্প করে তেল কালারমারছড়ায় স্থাপিত ট্যাংকে স্টোরেজ শুরু হয়। কোনো জটিলতা দেখা না দিলে খালাস করতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ৪৮ ঘণ্টা। এর আগে লাইটারেজ অপারেশন এর মাধ্যমে তেল খালাসের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৪ দিনের মতো সময়ের প্রয়োজন হতো।

গত ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, ‘এতোদিন বিদেশ থেকে যে তেল আমদানি করি তা মেন্যুয়েল পদ্ধতিতে খালাস করতাম। এর ফলে প্রচুর তেল অপচয় এবং আর্থিক ক্ষতি হতো। এসপিএম প্রযুক্তি হওয়ার ফলে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতেএখানে আমাদের জ্বালানির স্টোরেজ যেটা রয়েছে সেটির সক্ষমতা আরো বাড়াব। এর ফলে সরকারের লক্ষ্য ৬০ দিনের জ্বালানি তেল মজুদ রাখার এই জায়গায় আমরা করতে সক্ষম হবো।’

সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় গভীর সাগরে বয়া স্থাপনের পাশাপাশি কালারমারছড়ার সোনারপাড়ায় তিনটি পরিশোধিত ও তিনটি অপরিশোধিত তেলের স্টোরেজ ট্যাংকসহ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। স্টোরেজ ট্যাংকগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত তেল মজুদ রাখা হবে। প্রতিটি পরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাংকারের ধারন ক্ষমতা ৬০ হাজার ঘনমিটার ও অপরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাংকারের ধারন ক্ষমতা ৩৫ হাজার ঘনমিটার। এছাড়া ১৪৬ কিলোমিটার অফশোরে ও ৭৪ কিলোমিটার অনশোরসহ মোট ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। সমুদ্রের তলদেশের এই পাইপলাইনের মাধ্যমে শোর ট্যাংকে নেওয়া হচ্ছে আমদানি করা তেল।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে নেওয়া প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় চার দফা সংশোধন করে মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়েছে। আর এতে ব্যয় বেড়েছে এক হাজার ২১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *