চট্টগ্রাম

জলবায়ু তহবিলের টাকায় ‘কমঝুঁকি’ এলাকার উন্নয়ন

মেঘনার দাপটে ভেঙে খানখান চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের উড়িরচর। বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘরবাড়ি হারাচ্ছে বাঁশখালীর মানুষ। আনোয়ারা ও সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকার জমিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। মিরসরাইয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে তিন লাখের বেশি বাসিন্দা। ভূ-গর্ভস্থ পানিতে মিলছে আর্সেনিকও।

চট্টগ্রামের পাঁচ উপকূলবর্তী এসব উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের এমন ক্ষতি বেশি হলেও জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পে গুরুত্ব পায়নি মোটেও। উল্টো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার নামে এই তহবিলের টাকা দিয়ে হচ্ছে কমঝুঁকিতে থাকা উপজেলার সৌরবাতি স্থাপন, সড়ক নির্মাণ, সংস্কার, মেরামত ও উন্নয়নকাজ। প্রকল্পগুলো নেওয়া হয় আবার কয়েক দফায়।

ক্লাইমেট চেন্জ ট্রাস্ট ফান্ডের (সিসিটিএফ) নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি হওয়ার পর এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ৬২টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৩৫৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বর্তমানে ১১ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তবে চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী পাঁচ উপজেলার (মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও সন্দ্বীপ) জন্য প্রকল্প ছিল মাত্র হাতেগোনা দুয়েকটি। তাও আবার জলবায়ু ফান্ড গঠনের পরপরই বাস্তবায়ন করা হয়। বাস্তবে সেই প্রকল্প কতটুকু কার্যকর সেটাও বিবেচনায় নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

যার ক্ষতি বেশি তার জন্য নেই এই ফান্ডের বরাদ্দ। বরং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলার নামে অপেক্ষাকৃত কমঝুঁকিতে থাকা উপজেলা ও নগর উন্নয়নে যাচ্ছে এই ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা। যা দিয়ে পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়ক নির্মাণ, সংস্কার, মেরামত, সৌর বাতি স্থাপনের কাজ এমনকি সড়ক অবকাঠামোও গড়ে তোলা হয়েছে। তবে প্রকল্পগুলো প্রত্যক্ষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনরোধে সহায়ক না হলেও পরোক্ষভাবে কাজ করছে বলে মন্তব্য জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষের।

এক যুগে উপকূলীয় জনপদে যেটুকু কাজ হয়েছে, তাতেও রয়েছে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ। সংশ্নিষ্ট দপ্তরগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে টাকা বরাদ্দ না পেয়ে সাধারণ কাজেও খরচ করেছে জলবায়ু তহবিলের টাকা। গেল দুই মাস প্রকল্পগুলোর হালহকিকত জানার চেষ্টা করেছে সিভয়েস।

প্রকল্প পর্যালোচনায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনে নারী ও শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকলেও চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী উপজেলার নারী-শিশুদের জন্য নেই কোনো প্রকল্প। এমনকি প্রকল্প বাছাইয়ে স্বাস্থ্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও স্বাস্থ্যখাতেও নেওয়া হয়নি কোনো প্রকল্প। অপরদিকে ঝুঁকি মোকাবেলার নামে এই তহবিলের প্রায় পুরো অংশ ব্যবহার হয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের পেছনে। এছাড়া, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও গত ১৩ বছরে গবেষণা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে মাত্র ৫টি। বরং জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পে বরাদ্দ আসে স্থানীয় সংসদ সদস্য বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবের কারণে-এমনটিই বলছেন জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষ। এমনকী উপজেলাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা, ঘরবাড়ি হারানো মানুষের হিসাব, কোন কোন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে সে হিসাব রাখেনি সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *