চট্টগ্রাম

জলাতঙ্ক নির্মূলে কুকুরের টিকাদান, বাকি রইলো অনেক

জলাতঙ্ক নির্মূলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধীনে ৪১টি ওয়ার্ডে কুকুরের টিকাদান (এমডিভি) কর্মসূচি শেষ হয়েছে শনিবার (১১ মে)।

মঙলবার (৭ মে) থেকে শুরু হয়ে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে এ কার্যক্রম।

এজন্য প্রতিটি টিমে কাজ করেছে ২ জন কুকুর ধরার লোক, ১ জন টিকাদান কর্মী, ১ জন তথ্য সংগ্রাহক, ১ জন স্থানীয় দিকনির্দেশক।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৪১টি ওয়ার্ডে ৪৬টি টিম পর্যবেক্ষণ করেন এমডিভি সুপারভাইজার, ওয়ার্ড সচিব ও এমডিভি এক্সপার্ট।

টিকাদানকৃত কুকুরকে লাল বা গোলাপি রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইসাথে ডিজিটাল মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিটি কুকুরের রেকর্ড নিশ্চায়ন করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড এলাকা দুপুর ৩টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং যেসব কুকুর টিকার আওতায় আসেনি, সেগুলোকে পরবর্তীতে টিকার আওতায় আনা হবে।

চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে দেখি কুকুর খুব আগ্রাসী থাকে এবং দলবদ্ধভাবে প্রায়শ পথচারীদের ধাওয়া করে। এজন্য জলাতঙ্ক নির্মূলে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন। আশা করি, এমডিভি কর্মসূচির মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে জলাতঙ্ক রোগ শতভাগ নির্মূল করা সম্ভব হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পথের পাশের বেওয়ারিশ কুকুর আঁচড় কিংবা কামড় দিলে র‌্যাবিস ভাইরাস সংক্রমণে মস্তিষ্কে প্রদাহ হয়। একে বলা হয় ‘এনকেফালাইটিস’, যা আমাদের কাছে জলাতঙ্ক রোগ হিসেবে পরিচিত। এতে মৃত্যুহার প্রায় একশ ভাগ।

প্রাণীটি কামড় দেওয়ার পর পাঁচদিন থেকে শুরু করে কয়েক বছরের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন মাসের ভেতরেই লক্ষণ প্রকাশ পায়। আক্রান্ত স্থানে ব্যথা, চুলকানি, ঝিন ঝিন ভাব, অনুভূতি কমে যায়। এরপর অনুভব হয় শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, জ্বর, বমি। লালা ঝরতে থাকে। বাতাস হলে ও পানি দেখলে ভয় লাগে। চোখে আলো পড়লে অস্বস্তি লাগে।

মাংসপেশিতে টিকা নিলে সাতদিন পর দুটি নিতে হবে। চামড়ার নিচে নিলে দুই পাশে দুই ডোজ। সাতদিন পর দ্বিতীয় ডোজ। সামান্য আঁচড় কাটলে এবং রক্তক্ষরণ না হলে ক্ষতস্থানের চিকিৎসা এবং যত দ্রুত সম্ভব অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন এক ডোজ নিতে হবে। একাধিক কামড় বা আঁচড় এবং কামড়ের অবস্থান যদি মুখে, ঘাড়ে, মাথায়, হাতে হয় এবং প্রাণীটি যদি জলাতঙ্ক আক্রান্ত থাকে অথবা জলাতঙ্ক আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহ করা হয় তাহলে অবশ্যই অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিনের পাশাপাশি ইমিউনোগ্লোবিলিন টিকাও নিতে হবে।

জলাতঙ্কের প্রধান বাহক পথকুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও জলাতঙ্ক রোগের টিকা দিতে ২০২১ সালের জুন মাসে একটি প্রকল্পের অধীনে কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)। কুকুরকে হত্যা না করে চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং রোগমুক্ত করাই ছিল এ প্রকল্পের লক্ষ্য। অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হলেই এসব কুকুরকে ছেড়ে দেওয়া হতো। বিশ্ববিদ্যালয়টির ফিজিওলজি ও প্রাণিকল্যাণ বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ রাশেদুল আলমের নেতৃত্বে সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তুলি দেসহ শল্যচিকিৎসকরা ‘নিউটার (বন্ধ্যাকরণ)’, ‘ভ্যাকসিন (জলাতঙ্ক টিকা)’ প্রদানের কাজও করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *