জলে গেল চসিকের ৪ কোটি টাকা
কোনও কাজেই আসছে না চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের একমাত্র এস্কেলেটর বা চলন্ত সিঁড়ির ফুটওভার ব্রিজটি। নির্মাণের দুই মাস পর থেকে ফুটওভার ব্রিজটি তালাবদ্ধ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনও প্রকার যাচাই-বাচাই না করে অহেতুক প্রকল্প নিয়ে সরকারি অর্থের নয়-ছয় করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। চসিক কর্মকর্তারা বলছেন, বাড়তি বিদ্যুৎ বিলের বোঝা কমাতে এটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর জাকির হোসেন সড়কের চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সামনে এ ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। হাসপাতালে আসা রোগী-স্বজনদের নিরাপদে সড়ক পারাপারের জন্যই সাধারণ সিঁড়ির পাশাপাশি ব্রিজটিতে যুক্ত করা হয়েছিল চলন্ত সিঁড়ি। কিন্তু ফুটওভার ব্রিজে চলন্ত সিড়ি চালুর মাত্র দুই মাসের মধ্যে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সিঁড়ির দুই পাশের ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে তালা। এ কারণে লোকজনের ইচ্ছে থাকলেও এটি ব্যবহার করতে পারছেন না। সবাই আগের মতোই ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হচ্ছেন। তবে সড়ক পার হতে মাঝখানে কোনও প্রতিবন্ধকতা না থাকায় এ ফুটওভার ব্রিজে ওঠার প্রতি কারো তেমন আগ্রহও নেই। স্থানীয়রা এ ফুটওভার ব্রিজকে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বলে আখ্যা দিয়েছেন।
চসিক সূত্র জানায়, ২০২০ সালে এস্কেলেটর যুক্ত ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। এটিই নগরীর একমাত্র ও প্রথম চলন্ত সিঁড়ির ফুটওভার ব্রিজ। ওই বছরের ৩০ জানুয়ারি এটির উদ্বোধন করা হয়। এটির দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট এবং প্রস্থ ৯ ফুট। এই ফুটওভার ব্রিজটিতে ওঠার জন্য লাগানো হয়েছে দুটি এস্কেলেটর। তবে নামার জন্য রাখা হয়েছে সাধারণ সিঁড়ি। ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণে চসিকের ব্যয় হয় ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। উদ্বোধনের দুই মাসের মধ্যে করোনা মহামারির অজুহাতে এটি তারা বন্ধ করে রাখে। এরপর থেকে আজ অবধি খেলা হয়নি। অথচ উদ্বোধনের সময় বলা হয়, এই ফুটওভার ব্রিজ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চালু থাকবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘এটি ছিল চসিকের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প। যেখানে এ ফুটওভার ব্রিজ বসানো হয়েছিল সেখানে অত বেশি লোকজনের চলাচল নেই। যে কারণে এটি ব্যবহারও তেমন হচ্ছে না। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জনসাধারণের অর্থের অপচয় হয়েছে মাত্র, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এই ফুটওভার ব্রিজ যখন নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন আমি চসিকের তৎকালীন মেয়রের কাছে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম।’
চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন জানান, ‘চলন্ত সিঁড়ির ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণের পর চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারাই মূলত এটির দেখভাল করেন।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটি যে পরিমাণ লোক ব্যবহার করে তার চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ বিল আসে। এ কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এটিকে নতুন জায়গায় নিয়ে বসানোর চিন্তা রয়েছে।’