জাতীয়

জাহাজের দায়িত্বে নতুন সশস্ত্র জলদস্যু

মোজাম্বিক থেকে আবুধাবি যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ সোমালিয়ান কোস্ট হতে ৭ মাইল দূরে নোঙর করেছে। সেখানে ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ ১৫-২০ জনের নতুন দল জাহাজের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে। সাথে আছে ইংরেজি জানা একজন ইন্টারপ্রিটারও। এদিকে, জাহাজের চিফ কুক আরেকজনকে সাথে নিয়ে প্রায় ৫০ জনের জন্য ২-৩ বেলা রান্না করছে। নাবিকরা কম করে খেলেও জলদস্যুরা ভরপেট খাচ্ছে। ফলে, খাবার সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে এসব তথ্য জানিয়েছেন মার্চেন্ট নেভির ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান।

তিনি বলেন, ‘জাহাজের নাবিকরাই সব দায়িত্ব পালন করেছে, জলদস্যুরা শুধু অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছে। নোঙর করতে জাহাজের সম্মুখভাগে গিয়েছিল চিফ অফিসার, বোসান এবং আর একজন সাধারণ নাবিক। জাহাজে সোমালিয়া হতে ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ ১৫-২০ জনের নতুন দল এসেছে দায়িত্ব বুঝে নিতে। এদের সাথে একজন ইংরেজি জানা ইন্টারপ্রিটারও আছে। জলদস্যুদের মূল ভাষা সোমালি আর আরবি।’

ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান বলেন, ‘জাহাজের নাবিকরা সবাই শারীরিকভাবে সুস্থ আছে। ওরা সেহরি, ইফতার করছে আর ব্রিজে জামাতে নামাজ আদায় করছে। জাহাজের চিফ কুক আরেকজনকে সাথে নিয়ে প্রায় ৫০ জনের জন্য ২-৩ বেলা রান্না করছে। নাবিকরা কম করে খেলেও জলদস্যুরা ভরপেট খাচ্ছে। গতকাল সবাই ব্রিজে থাকলেও আজ সবাইকে দিনের বেলা কেবিনে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে রাতে সম্ভবত আবার ব্রিজেই ফিরতে হবে। এতে জাহাজের খাবার আর পানির ব্যবহার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। খাবার ২৫ দিন যাবে বলা হলেও হয়ত ১১-১২ দিন পরেই শেষ হয়ে যাবে। ২০০ টন পানি শেষ হয়ে গেলে রেশনিং বা ব্যয় সংকোচন শুরু হবে। জলদস্যুরা কি মানের খাবার বা পানি দিবে সেটা এই মুহূর্তে বলা কঠিন তবে শিপের মত মানসম্পন্ন অবশ্যই হবে না। খাবারের পরিমাণ কমিয়েও দিতে পারে।’

‘এখন পর্যন্ত সোমালিয়ার জলদস্যুরা মুক্তিপণ হিসাবে কোন নির্দিষ্ট অংক দাবি করেনি। পত্রপত্রিকায় যা ছাপা হচ্ছে সেটা ভুয়া কিংবা গুজব। কোন নাবিকের ফ্যামিলি মেম্বার ছড়াতে পারে। ওরা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। খাবার-পানি কমে যাচ্ছে। আশাকরি এই সমস্যার দ্রুততম সময়ে সমাধান হবে। নাবিকরা নিরাপদে ফিরে আসবে।’ যোগ করেন তিনি।

এর আগে, গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় বেলা একটার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সশস্ত্র জলদস্যুরা মাত্র ১৫ মিনিটে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এর পর সোমালিয়া উপকূলের দিকে যাত্রা শুরু করে। আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরের দিকে সোমালিয়ার গ্যারাকাড উপকূলে পৌঁছেছে জাহাজটি।

জাহাজে থাকা নাবিকেরা হলেন, জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মো. শামসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই গ্রুপের এসআর শিপিং এর আরেকটি জাহাজও জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেই জাহাজের নাম জাহান মণি। ৪০ কোটি টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ থেকে মুক্তি পান ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *