জীবন ঝুঁকিতে গোমতীর দুই পাড়ের মানুষ, দূর্বিষহ জনজীবন
টানা তিনদিনের প্রবল বর্ষণ ও ভারতীয় ঢলে বিপৎসীমার ৯২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে গোমতী নদীর পানি। এতে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন গোমতীর দুই পাড়ের মানুষ। দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। আসবাবপত্র ও পোষাপ্রাণীগুলো নিয়ে বেড়িবাঁধে উঠে এসেছে চরাঞ্চলের মানুষ।
এদিকে, ভারতের ত্রিপুরার ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় ও প্রবল বর্ষণে কুমিল্লার গোমতীর নদীর পাশাপাশি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কাঁকড়ি নদীর পানিও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে খাল দিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা শহরে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম অংশ পানিতে ডুবে যাওয়ায় যাত্রীদেরও ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে।
এদিকে, কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুত করা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে চরাঞ্চলের মানুষদের নিরাপদে নিতে কাজ করছে জেলাপ্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, ছাত্র সমন্বয়কারী ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) সকাল থেকে গোমতীর কোলঘেষা কামারখাঁড়া, দূর্গাপুর, জগন্নাথপুর, ঝালুয়াপাড়া, দেবপুর, কংশনগর, পালপাড়া, কাইতরা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কামারখাঁড়া এলাকায় গোমতী নদীর সাথে সংযুক্ত সেচ পাইপ দিয়ে পানির স্রোত ঢুকে পড়েছে বেড়িবাঁধের অপরপাশে লোকালয়ে। এতে নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাচ্ছে স্থানীয়রা। এছাড়াও, সদরের জগন্নাথপুর ঝালুয়াপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধের ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে বাঁধের ফাটলে বালুর বস্তা ও বাঁশ দিয়ে পানির স্রোত আঁটকানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও, গোমতির উত্তরপাড়ের বিভিন্ন লোকালয়েও পানি ঢুকে ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে।
তবে, পানি বেড়ে যাওয়ায় চরম দূর্ভোগ ও হতাশায় আছেন আয়ের একমাত্র অবলম্বন কৃষি কাজ করা নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরাও। চর ডুবে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পানি বেড়িবাঁধের কাছাকাছি উঠে আসায় চর ভূমিতে চাষাবাদ করা নানান শাক সবজি ও অন্যান্য ফসল এখন পানির নিচে। টানা ২ দিন পানির নিচে থাকায় ফসল আর রক্ষা করা যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন চরের কৃষকরা।
এসব কৃষকরা নদীর চরে চাষাবাদ করেই মূলত জীবিকা নির্বাহ করেন। গোমতীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে অনেক কৃষকের লাউ, ঢেঁড়স, ঝিঙ্গা, মূলা, লাল শাক, পানিতে ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা নদীর চরের কাছে দাঁড়িয়ে হা-হুতাশ করছেন। তারা বলছেন, আমাদের আর বাঁচার মতো কিছুই রইলো না। ঘর গেলো, ক্ষেত খামারও চলে গেলো। চাষ করা জমিগুলো পানির নিচে। কি নিয়ে বাঁচবো আমরা।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এমন টানা বৃষ্টি আরো দুইদিন থাকবে। কুমিল্লা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির নমুনা ভালো নয়, টানা আরো দুইদিন চলতে পারে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান বলেন, সকাল ১০ টায় ছিলো পানি বিপৎসীমার ৭১ সে.মি উপরে থাকলেও দুপুর ১২ টায় তা পৌঁছেছে ৯২ সেন্টিমিটারে। আমরা বাঁধগুলো রক্ষায় সর্বোচ্চ কাজ করছি। প্রতিটি পয়েন্টেই আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, আমাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবগুলো পয়েন্টে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এছাড়াও ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি আমরা। আমরা বাঁধে কোনো ফাটল সৃষ্টির খবর পেলেই সেখানে দ্রুত আমাদের টিম পাঠাচ্ছি। আমাদেরকে স্থানীয় লোকজনও সহযোগিতা করছেন।