অর্থনীতি

জুয়েলারি খাতে ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব বাজুসের

জুয়েলারি খাতে আরোপিত শুল্ক হার কমানো ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। পাশাপাশি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) স্থাপন ও স্বর্ণ পরিশোধনগার শিল্পে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা চেয়েছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে এ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, সহ-সভাপতি রিপনুল হাসান, মাসুদুর রহমান ও কার্যনির্বাহী সদস্য এবং ট্যারিফ অন ট্যাক্সেশন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। এসময় এনবিআর চেয়ারম্যান বাজুসের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।

বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় বলা হয়, সোনার অলংকার বিক্রয়ে ৩ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ, নিবন্ধনকৃত সকল জুয়েলারিতে ইএফডি স্থাপন, আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের আমদানি শুল্ক রেয়াতি হারে ১ শতাংশ নির্ধারণ, শুল্কহার ৫ শতাংশ, অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত রাফ ডায়মন্ডের প্রস্তাবিত শুল্কহার নির্ধারণ, ল্যাব গ্রাউন ডায়মন্ড এইচএস কোডে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ১০ শতাংশ শুল্ক, ৪০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করার শর্তে বাজুসের প্রস্তাবিত শুল্কহার নির্ধারণ, স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডে প্রদান, সোনার অলংকার তৈরির জন্য কাঁচামাল ও মেশিনারি আমদানি ক্ষেত্রে সকল প্রকার শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদান ও ১০ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডে প্রদান, দেশের জুয়েলারি শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কর অব্যাহতি প্রদান, ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটকদের সোনার বার আনা বন্ধ এবং সোনার অলংকার ১০০ গ্রামের পরিবর্তে ৫০ গ্রাম আনার বিধান চালু করা, পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে ব্যাগেজ রুলের সমন্বয় করে একটি আইটেমের দুইটির বেশি জুয়েলারি আনা বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাজুস। একই সঙ্গে একজন যাত্রী বছরে একবার ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিতে পারবেন, ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহারের কারণে ডলার সংকট, চোরাচালান ও মানি লন্ডারিংয়ে কী প্রভাব পড়ছে তা নিরূপনে বাজুসকে যুক্ত করে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে বাজুস।

এছাড়াও বৈধভাবে সোনার বার, অলংকার, সোনার কয়েন, রপ্তানি উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করার শর্তে রপ্তানিকারকদের ৫০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া, এইচএস কোড ভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্কহার হ্রাস কমে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে এসআরও জারি, চোরাচালান প্রতিরোধে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে উদ্ধারকৃত সোনার মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ উদ্ধারকারী সংস্থাসমূহের সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে বাজুস।

বাজুস বলছে, জুয়েলারি এদেশের প্রাচীন শিল্পের মধ্যে অন্যতম। সম্ভাবনাময়ী জুয়েলারি শিল্পের বাজার দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। জুয়েলারি শিল্প বিশ্ব দরবারে তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের একটি বড় খাত হিসেবে পরিচিতি পেতে যাচ্ছে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে সোনার বার্ষিক চাহিদা ২০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন।

বৈধভাবে এই চাহিদা পূরণ এবং জুয়েলারি ব্যবসাকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে বড় বাধা কাঁচামালের উচ্চ মূল্য, অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয়, শিল্প সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির উচ্চ আমদানি শুল্ক ও উচ্চ বিনিয়োগ। এছাড়া এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় সকল ধরনের পণ্য ও যন্ত্রপাতির শুল্ক ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। যা স্থানীয় অন্যান্য শিল্পে আরোপিত শুল্কের চেয়ে অনেক বেশি। যার কারণে বড় বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি এই শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দামের পার্থক্য প্রায় ১০ হাজার টাকা হয়ে যায়। আবার এর সঙ্গে যোগ হয় ৫ শতাংশ মূসক। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ভোক্তা সাধারণের ওপর।

বাজুসের প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে এই সর্ব প্রথম সোনা পরিশোধনাগার স্থাপন হয়েছে। বিশ্ব বাজারে আর কিছুদিন পর রপ্তানি হবে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ সম্বলিত সোনার বার। যা এ দেশের জুয়েলারি শিল্প সম্প্রসারণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু এই পরিশোধনাগার স্থাপনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ার কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জুয়েলারি শিল্পের ওপর।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এই খাতে আরোপিত শুল্ক হার কমানো ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করলে সরকারের রাজস্ব খাতে শুধু নতুন খাতই যুক্ত হবে না, বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের আরেকটি খাতও তৈরি হবে। এই অবস্থায় মুক্ত বাজার অর্থনীতির যুগে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, সোনার অলংকার রপ্তানির সক্ষমতা তৈরি, নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সর্বোপরি সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাজুসের প্রস্তাবনা সমূহ ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় এই প্রস্তাবনায়।

বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় বলেন, সারাদেশে ৪ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি বসানো হলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারবে। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সমতা আসবে। সোনার উপর ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণ, জুয়েলারি সংশ্লিষ্ট কর অব্যাহতি প্রদান, অপরিশোধিত ও আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণের উপর কাস্টমস ডিউটি কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাজুস।

তিনি আরও বলেন, স্বর্ণ নীতিমালা সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটকদের সোনার বার আনা বন্ধ করা, ট্যাক্স ফ্রী সোনার অলংকার ১০০ গ্রামের পরিবর্তে ৫০ গ্রাম করার প্রস্তাব করছি। তিনি পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে ব্যাগেজ রুল সমন্বয় ও একজন যাত্রীকে একবার ব্যাগেজ রুলের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান রিটার্ন দাখিল করে কিনা তা কর্মকর্তাদের খোঁজ নিতে বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। পাশাপাশি জুয়েলারি ও ই-কমার্স খাতকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *