টেকনাফে অপহরণকারী চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার, প্রধানকে খুঁজছে পুলিশ
কক্সবাজারের টেকনাফে এক সপ্তাহে ১৫ ব্যক্তিকে অপহরণকারী চক্রের গ্রেপ্তার দুই সদস্য দিয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে চক্রপ্রধান মোর্শেদ ও হেলালকে গ্রেপ্তারে তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি চক্রটির বাকি সদস্যেরও শিগগিরই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণি।
তিনি জানান, ২১ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে টেকনাফের হ্নীলা, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন থেকে ১৫ ব্যক্তিকে অপহরণের ঘটনায় মোর্শেদ-হেলাল বাহিনী জড়িত। বুধবার (২৭ মার্চ) মধ্যরাতে জাহাজপুরা পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে অপহৃত যে ১০ ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান শুরু করে। বুধবার ভোরে পৃথক অভিযানে অপহরণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুই ব্যক্তিকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তারা হলেন উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যং এলাকার মৃত রুহুল আমিনের ছেলে মো. নবী সুলতান নবীন (৩৫) ও বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শিলখালী এলাকার মৃত হোছনের ছেলে মো. ছলিম (২৬)।
অভিযানে একটি দেশি ওয়ান শুটার গান ও নানা আকারের আটটি রাম দা উদ্ধার করা হয়েছে।
নবী সুলতানকে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যংস্থ ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উত্তর পাশে পাহাড় থেকে এবং ছলিমকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছলিম চিহ্নিত ডাকাত। ডাকাতি মামলায় তিনমাস আগে জামিনে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছে।
ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি জানান, বুধবার ১০ জনকে উদ্ধারের ঘটনায় অপহৃত একজনের বাবা বাদি হয়ে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করেছেন। একই সঙ্গে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ অস্ত্র আইনে আরও একটি মামলা করেছে। সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার এ দুজনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে আদালতে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।
তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেছে জানিয়ে ওসি বলেন, ২১ মার্চ হ্নীলার পানখালীর পাহাড়ি এলাকা থেকে পাঁচজন, ২৬ মার্চ হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে দুজন এবং ২৭ মার্চ বিভিন্ন সময় হোয়াইক্যংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে আটজনকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে মোর্শেদ ও হেলাল চক্রের গ্রেপ্তার দুই সদস্য।
গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাহারছড়ার সন্ত্রাসী মোর্শেদ ও হেলালের নেতৃত্বে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের নিয়ে অপহরণকারী চক্রটি গড়ে উঠেছে। তারা পাহাড়ের গহিনে নানা স্থানে আস্তানা তৈরি করেছে।
২১ মার্চ পাঁচজন অপহরণের ঘটনাটি মুক্তিপণ আদায়ের টার্গেট নিয়ে করা হলেও পরের ১০ জনকে অপহরণ করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে। এ ১০ জনকে যে পাহাড়ি এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়েছে তা চক্রটির সদস্যদের আসা-যাওয়ার পথ। এ পথের প্রতিবন্ধকতা দূর ও আতঙ্ক তৈরি করতেই তাদের অপহরণ করা হয়।
১০ ব্যক্তিকে অপহরণের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল নতুন আস্তানা তৈরি করা। চক্রপ্রধানদের পরিকল্পনা ছিল, ১০ ব্যক্তিকে যে সব ক্ষেত থেকে অপহরণ করা হয়েছে সেখানে একটি নতুন আস্তানা তৈরি করা। অপহরণের মাধ্যমে তারা কৃষককে এসব ক্ষেতে না যাওয়ার একটা বার্তা দিতে চেয়েছিল।
অপহরণকারী চক্রের গ্রেপ্তার এ দুই সদস্যের কাছ থেকে বাকি সদস্যের অনেকের নাম-পরিচয় জানা গেছে। চক্রপ্রধান মোর্শেদ ও হেলালের পাশাপাশি তাদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি।
গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ জন স্থানীয়। বাকিরা আশ্রিত রোহিঙ্গা।
ভুক্তভোগীদের পরিবারের তথ্যমতে, অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫১ জনকে ছাড়াতে মুক্তিপণ দিতে হয়েছে।
এদিকে ৯ মার্চ হ্নীলার পূর্ব পানখালী থেকে অপহরণ হওয়া মাদ্রাসাছাত্র ছোয়াদ বিন আবদুল্লাহকে ২০ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ ওই অপহরণের ঘটনায় ব্যবহৃত অটোরিকশার চালক ও নারী সদস্যসহ চক্রটির পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার পাঁচ নারীই রোহিঙ্গা।
মাদ্রাসাছাত্র ছোয়াদ বিষয়ে ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি জানান, এ ঘটনায় জড়িত চক্র ও মাদ্রাসাছাত্রের বর্তমান অবস্থান পুলিশ শনাক্ত করেছে। এ বিষয়ে পুলিশ একটি শুভবার্তা দিতে পারবে।