টেক্সি থেকে লাফ দিয়ে অপহরণকারীদের হাত থেকে রক্ষা
প্রতিদিনের মতো স্কুল ছুটির পর দুপুরে বাড়ি ফিরছিল ১২ বছরের মো. সাজিদুল ইসলাম। পথে এক নারী তাকে কৌশলে অজ্ঞান করে তুলে দেয় অপহরণকারী চক্রের হাতে।
তবে নিজের বুদ্ধিমত্তায় টেক্সি থেকে লাফ দিয়ে রক্ষা পায় সে।
রোববার (৫ মে) রাউজানের চুয়েট স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাজিদুল ইসলাম এভাবেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল।
সে পাহাড়তলী ইউনিয়নের মোহাম্মদ ওসমানের ছেলে। বাসায় ফিরে না আসায় সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজা হয় তাকে। বিষয়টি জানানো হয় রাউজান থানা পুলিশকেও।
অপহরণের ১৩ ঘণ্টা পর সাজিদুলকে উদ্ধারের ঘটনার বর্ণনা দেন তার মামা সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী। তিনি জানান, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় এক মহিলা তাকে একটি কাগজ দিয়ে সেখানে লেখা ঠিকানাটি কোথায়- জানতে চায়। কাগজে লেখা অক্ষরগুলো ছিল খুবই ছোট। সাজিদুল সেই লেখা দেখতে কাগজটি চোখের কাছাকাছি নিয়ে এলে সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে যায়।
সাজিদুল জানিয়েছে, জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে একটি বেড়ার ঘরে দেখতে পায়। সেখানে তিন যুবক তাকে মায়ের মোবাইল নম্বর দিতে বলে। মোবাইল নম্বর জানে না বললে যুবকরা তাকে মারধর করে। এরমধ্যে তাকে খোঁজাখুজি শুরু হলে অপহরণকারীরা সিএনজি টেক্সিতে তুলে তাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। মুন্সির ঘাটা এলাকায় পৌঁছালে টেক্সি থেকে কৌশলে লাফ দেয় সাজিদুল। এরপর সেখানকার একটি দোকানে গিয়ে তার মায়ের মোবাইলে ফোন করে। পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে রাত দুইটার দিকে বাড়ি নিয়ে আসে।
পুলিশ বলছে, বিভিন্ন কৌশলে প্রতারক চক্র প্রতারণা করছে। সাজিদুলের যে ঘটনা জানা গেল, তাতে মনে হচ্ছে কাগজে কোনো কেমিক্যাল মেশানো ছিল। তাই চলতিপথে, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে অপরিচিত কেউ সাহায্যের জন্য বা খাতির করতে এলে পাত্তা দেওয়া যাবে না। অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সব ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো কিছু খেতে দিলে খাওয়া যাবে না।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, দেশে ভয়ংকর মাদক স্কোপোলামিন বা ডেভিলস ব্রেথ (শয়তানের নিশ্বাস)-এর ব্যাপক বিস্তার ঘটছে। বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় রয়েছে এ ধরনের মাদক-সংশ্লিষ্ট অপরাধী চক্র। এই মাদকের সংস্পর্শে এলে টার্গেট ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অপরাধীদের কাছে। মাদক স্কোপোলামিনের ব্যবসায় দেশিয় চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশে অবস্থানরত কতিপয় বিদেশি নাগরিকও।
স্কোপোলামিনের মাধ্যমে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে দিয়ে যেকোনও ধরনের কাজ করানো সম্ভব। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে টার্গেট করা নারী বা পুরুষের শরীরে এই মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে অপরাধী চক্র তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এছাড়া পানির সঙ্গে মিশিয়েও পান করানো হচ্ছে এই মাদক। শ্বাস-প্রশ্বাস কিংবা পানি খাওয়ার মধ্য দিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তি অপরাধীদের কব্জায় চলে আসে। স্কোপোলামিনের ভয়াবহতা ঠেকাতে এরইমধ্যে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
জানা গেছে, স্কোপোলামিন বেশি তৈরি হয় কলম্বিয়ায়, যার বড় বাজার রয়েছে মেক্সিকোতে। মাদকসেবীরা এটি সেবন করে নিজেদের চিন্তাশক্তি হারিয়ে অপার্থিব কল্পনার শক্তিতে চলে যায়। দেশে এই মাদক ব্যবহার করে অপরাধ কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছে অপরাধী চক্র-এ তথ্য পুলিশের।