ঢাকায় পৌঁছেছে প্রথম ফিরতি হজ ফ্লাইট
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে প্রথম ফিরতি হজ ফ্লাইট। শুক্রবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে ৪১৭ জন হজযাত্রী নিয়ে শাহজালালে পৌঁছায় ফ্লাইটটি।
তাদেরকে স্বাগত জানাতে স্বজনদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বেবিচক চেয়ারম্যান, বিমানের এমডিসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয় হাজীদের। এয়ারপোর্টেই দেয়া হয় জমজমের পানি।
এসময় সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ নিয়ে সন্তোষ জানান তারা। বলেন, নিজের গুনাহ মাফ চাওয়ার পাশাপাশি দেশ, পরিবার, ফিলিস্তিন ও পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া চেয়েছেন।
বিমানের এমডি জানান, ফিরতি হজ ফ্লাইট ভোগান্তিহীন করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, হাজীদের যাওয়া-আসার পথে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছেন। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে, হজ ব্যবস্থাপনা আরও সুচারুভাবে হবে।
এদিকে, চলতি বছর হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৩০ জন বংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে ১৭ জন এবং হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পর ১৩ জন মারা গেছেন। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ সম্পর্কিত বুলেটিনে ২৭ জন হজযাত্রীর মারা যাওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
হজ সম্পর্কিত সবশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, মারা যাওয়া (অফিসিয়ালি ঘোষিত ২৭ জন) হজযাত্রীদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ ও পাঁচজন নারী। তাদের মধ্যে মক্কায় ২০ জন, মদিনায় চারজন, মিনায় দুজন এবং জেদ্দায় একজন মারা গেছেন।
অন্যদিকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পর যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- ঢাকার বংশালের মনির হোসেন (৫৯), কিশোরগঞ্জের ফাতেমা ইয়াসমিন (৫৩), পিরোজপুরের নার্গিস (৬০), ঢাকা নিউমার্কেটের আমিনুল ইসলাম (৬৫), নোয়াখালীর মোয়াজ্জেম হোসেন (৬৮), রংপুরের সিদ্দিকুর রহমান (৪৮), ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিক তোফাজ্জল হক (৭০), ঢাকা মোহাম্মদপুরের রওশন আরা বেগম (৭২), বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার রেজাউল করিম মন্ডল (৬১), টাঙ্গাইল সদরের আলমগীর হোসেন খান (৭৩)।
হজ ডেস্কে তথ্যমতে, হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে গত ১২ জুন বুধবার সৌদিতে দুজন মারা যান। তারা হলেন- মো. শাহ আলম (৭৭) ও সুফিয়া খাতুন (৬২)। তাদের বাড়ি যথাক্রমে কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ। আর এ বছর হজ পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে গত ১৫ জুন মারা যান নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মো. আসাদুজ্জামান নামে এক হজযাত্রী।
মারা যাওয়া অন্য হজযাত্রীরা হলেন- মো. ভোলা জেলা মো. মোস্তফা (৯০), কুড়িগ্রাম জেলার লুৎফর রহমান (৬৫), ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জের মুরতাজুর রহমান (৬৩), চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার মোহাম্মদ ইদ্রিস (৬৪), ঢাকা জেলার মোহাম্মদ শাহজাহান (৪৮), কুমিল্লা জেলার আলী ইমাম ভুঁইয়া (৬৫), কক্সবাজার জেলা মহেশখালী উপজেলার মো. জামাল উদ্দিন (৬৯), কক্সবাজার জেলা রামু উপজেলার মোহাম্মদ নুরুল আলম (৬১), কক্সবাজার জেলা চকরিয়া উপজেলার মাকসুদ আহমদ (৬১), ফরিদপুর জেলার মমতাজ বেগম (৬৩), ঢাকার রামপুরার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম (৫৭), গাইবান্ধা জেলা গোবিন্দপুর উপজেলার মো. সোলাইমান (৭৩), রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শাহজাদ আলী (৫৫) এবং রংপুরে তারাগঞ্জের গোলাম কুদ্দুস (৫৪)।
গত বছর বিভিন্ন দেশের অন্তত ২৪০ হজযাত্রীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। যাদের অধিকাংশই ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক।
প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ হজ করতে সৌদি আরব যান। চলতি বছর সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশ মিলিয়ে হজে অংশ নিয়েছেন মোট ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৪ জন।
এর মধ্যে বিদেশি রয়েছেন ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩১০ জন এবং সৌদি নাগরিক ও দেশটিতে অবস্থানকারী প্রবাসী মিলিয়ে হজে অংশ নিয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ৮৫৪ জন।
সৌদি আরবের সরকারি পরিসংখ্যান অফিস ‘জেনারেল অথরিটি ফর স্ট্যাটিস্টিকস’ (জিএএসটিএটি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে। সৌদি প্রেস এজেন্সির বরাতে সৌদি গেজেট হজে অংশগ্রহণকারীদের এ তথ্য জানিয়েছে।
জিএএসটিএটি বলছে, স্থানীয় ও বিদেশি মিলিয়ে এবার ৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৭ জন পুরুষ হজে অংশ নিয়েছেন; নারী রয়েছেন ৮ লাখ ৭৫ হাজার ২৭ জন।
মোট অংশগ্রহণকারীর মধ্যে আরব দেশগুলো থেকে গেছেন ২২ দশমিক ৩ শতাংশ। এশিয়ার ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ, আফ্রিকার ১১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের হজযাত্রী রয়েছেন ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
এর মধ্যে সৌদি আরবে উড়োজাহাজে করে গেছেন ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৫ জন, স্থলপথে ৬০ হাজার ২৫১ জন এবং সমুদ্রবন্দর হয়ে হজে গেছেন ৪ হাজার ৭১৪ জন। এবার বাংলাদেশ থেকে হজ করতে সৌদি আরব গেছেন ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ।