তীব্র গরমেও রাবিতে সশরীরে ক্লাস, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
তীব্র তাপদাহের কারণে দেশব্যাপী হিট এলার্ট জারি করা হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজগুলোর ছুটি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড গড়ছে। চলমান এই তীব্র দাবদাহের কারণে ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের পানি শূন্যতা ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে ক্লাসের ফ্যান ও এসি বন্ধ থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক পড়াশোনা।
তবে ব্যতিক্রম সিদ্ধান্তে চলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রীষ্মের ছুটি পিছিয়ে ঈদুল আজহার ছুটির সাথে সমন্বয় করে চলমান দাবদাহে সশরীরে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ফলে, সশরীরে ক্লাস করতে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন নিয়মিত।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থীরা তীব্র গরমে ঘেমে নেয়ে উঠছেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ঘাড়ে ঝোলানো ব্যাগ পিঠের ঘামে ভিজে ছুপছুপ করছে। ক্লাসে যাওয়া আসার সময় অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমন অসুস্থ হওয়া কয়েকজনের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
শিক্ষার্থীরা জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তর হিট এলার্ট জারি করলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সশরীরে ক্লাস নিয়ে যাচ্ছে। যেটা শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর জন্য ঝুঁকির বিষয়। যেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক লোকজন বাসা থেকে বাহির হচ্ছে না সেখানে শিক্ষার্থীরা কিভাবে ক্লাস করতে যাবে। যতক্ষণ একজন শিক্ষার্থী মারা যাবে না ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের টনক নড়বে না। প্রশাসনের উচিত ক্লাসগুলো অনলাইনে নিয়ে আসা।
তীব্র গরমেও ক্লাস করায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান শোভন। তিনি বলেন, রোদের মধ্যে ক্লাসে যাতায়াতের কারণে প্রচুর পিপাসা লাগতো। আর বোতলের পানি তো গরম হয়ে থাকে। তৃষ্ণা লাগলে এটাই খেয়েছি। এখন জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়ায় একসাথে আক্রান্ত হয়েছি। ক্যাম্পাস খোলা রাখার উদ্দেশ্য হলো আমাদের পড়াশোনা। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। শুধু শুধু ক্যাম্পাস খোলা রেখে আমাদের কষ্ট করানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক আবদুল মজিদ অন্তর বলেন, চলমান তাপদাহের কারণে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। গরমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ক্লাস অনলাইনে নেওয়া।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক ডা. মো. তবিবুর রহমান শেখ বলেন, গরমের কারণে রোগের তেমন প্রাদুর্ভাব নেই। এমনিতে রোদে বের হওয়ায় সর্দি-জ্বর নিয়েই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা আসছে। এ সময় রোদে বের হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি নজরে আনবো। তবে ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে বিভাগগুলো প্রয়োজন মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু প্রশাসনের ওপরে ছেড়ে দিলে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি পিছিয়ে ঈদুল আযহার ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ছুটির আগ পর্যন্ত কোনো বিভাগ প্রয়োজন মনে করলে অনলাইনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু সকল পরীক্ষা সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে।