চট্টগ্রাম

দখলদার বাঁচাতে রেলওয়ের মনগড়া উচ্ছেদ সূচি

উচ্ছেদ অভিযান চালাতে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় প্রয়োজন ‘জানা কথা’। তবু বারবার সমন্বয় ছাড়া সূচি করে উচ্ছেদ কার্যক্রম ভেস্তে দিচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। যেন পাহাড়ের বুক চিরে গেড়ে বসা অবৈধ দখলদারদের বাঁচানোর কৌশল!

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্য না পাওয়ায় উচ্ছেদ সূচি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে বসে সূচি করলে বিফলে যেত না। অন্যদিকে নগর পুলিশ জানিয়েছে, পরপর দুদিন ফোর্স তৈরি করে নেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এমনকি অভিযান বাতিলের খবরটুকুও জানানো হয়নি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করে রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে চলতি বছরেই দুই দফায় অভিযান পরিচালনার নোটিশ দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাঠেই নামতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১৪ জুলাই থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত রেলওয়ে মালিকানাধীন ৬টি পাহাড়ের পাদদেশ এলাকায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের শিডিউল ঘোষণা করে। ১০ জুলাই রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সহকারী সচিব দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ বিষয়ে জানানো হয়। শিডিউল অনুযায়ী, ১৪ জুলাই ষোলশহর স্টেশন কলোনী, ১৫ জুলাই পলিটেকনিকের পাহাড়ি এলাকা, পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশে, ১৬ জুলাই টাইগারপাস ও একই এলাকার মামা-ভাগিনা মাজারের পিছনে এবং ১৮ জুলাই মতিঝর্ণা বাটালি পাহাড়ের পাদদেশ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম রেলওয়ে।

একইভাবে চলতি বছরে ১৮ জানুয়ারি কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ডুলাহাজারা স্টেশন এলাকায়, ২৪ জানুয়ারি পাহাড়তলী ওয়ার্ডের মাস্টার লেইন রেলওয়ে কলোনিতে এবং সর্বশেষ সোমবার ২৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের রিভিউ পিটিশন (২৮৬/২০২৩) আদেশ অনুযায়ী পশ্চিম মাদারবাড়ির রেলওয়ে মাস্টারপ্ল্যানভুক্ত প্লট-৬১ ও ৬২-তে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় ব্যর্থ এই সংস্থাটি।

দুই দফায় অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও পুলিশ সদস্য না পাওয়ার কারণে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। আগেও আমরা একই সমস্যায় পড়েছি। একইভাবে গতকালও (১৪ জুলাই) ম্যাজিস্ট্রেট পাইনি। আজকে (১৫ জুলাই) পুলিশ সদস্য পাওয়া গেলেও জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া যায়নি।’

এ বিষয়ে সিএমপির জনসংযোগ কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিম বলেন, ‘গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থেকে পুলিশ সদস্য রিকুজিশনের চিঠি এসেছিল। এরপর রবিবার ও আজকে (সোমবার) ফোর্স রেডি রাখা হয়েছিল। কিন্তু কোন কারণে অভিযান হয়নি। এমনকি অভিযান বাতিলের কোন খবরও আমাদের জানানো হয়নি।

একই বিষয়ে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মালেক বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় আমরা তাদের সাপোর্ট দিতে পারিনি। তারা যদি এ ধরনের শিডিউলগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও আমাদের সঙ্গে বসে নিতো, তাহলে মিস-শিডিউল হতো না। আমাদের কবে চিঠি দিয়েছে, তাও আমি সঠিকভাবে বলতে পারছি না। তবে এ ধরনের বিষয়গুলো সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিলে কার্যকর করতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।’

প্রসঙ্গত, গত ২৪ জুন ২৭ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৭ তম সভায় রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড় বা ভূমিতে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধভাবে বসবাসরত লোকজনকে সরাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সম্মিলিতভাবে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই সভায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *