চট্টগ্রাম

দুই কারণে আমের কাঙ্ক্ষিত ফলন না হওয়ার শঙ্কা

দুই কারণে এবার আমের কাঙ্ক্ষিত ফলন না হওয়ার শঙ্কা করছেন চাষীরা। অতিরিক্ত গরম ও কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে এ শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে গাছে যে পরিমাণ আম রয়েছে তা ধীরে ধীরে পরিপক্ক হচ্ছে। জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে আম আসতে শুরু করবে বলে জানিয়েছেন বাগান মালিকরা। তা নিয়ে প্রস্তুতিও শুরু করেছেন চাষীরা।

১৯৮০ দশকের শেষের দিক থেকে চট্টগ্রামসহ তিন পাবর্ত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় উন্নত জাতের আমের চাষ শুরু হয়। প্রথম প্রথম শখের বসে শুরু হলেও পরবর্তীতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আম চাষ বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে তা ব্যাপক আকারে বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। এমন কি দেশের নাম করা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ে। বাড়তে থাকে পাহাড়ে আম চাষের পরিধি। শুরুতে আ¤্রপালি জাতের চাষ শুরু হলেও পরে তা ধীরে ধীরে অন্য জাতের উন্নত আমের চাষ শুরু হয়। এরমধ্যে হাঁড়িভাঙ্গা, মল্লিকা, রাংগোয়াই, থাই বেনানা, থাই কাঁচামিঠা, বারি-৪, ল্যাংড়া, হিমসাগরসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের আম চাষ বাড়তে থাকে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রামসহ তিন পাবর্ত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় সর্বমোট ২১ হাজার ১৮৬ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের আমের চাষ হয়। তাতে ফলন হয় দুই লাখ ২৬ হাজার ৮৩৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়েছে বান্দরবান জেলায়। এ জেলায় ১০ হাজার ৬ হেক্টর জমিতে আমের ফলন হয় এক লাখ ১৩ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন। এর পরের অবস্থান খাগড়াছড়ি জেলায়। এ জেলায় ৪ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে আমের ফলন হয় ৪৫ হাজার ৫১১ মেট্রিক টন। অপর পাবর্ত্য জেলা রাঙামাটিতে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে হয়েছে ৩৭ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। চট্টগ্রামের তিন হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের আমের ফলন হয়েছে ৩০ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন। এ বছরও একই পরিমাণের চেয়ে আরো বেশি আমের চাষ হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রায় চার দশক ধরে চট্টগ্রামসহ তিন পার্বত্য জেলায় উন্নত জাতের আম চাষের বিপ্লবের সাথে সক্রিয় থাকা কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘১৯৮৭ সালে সপ্তম বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারে যোগদান করে পাবর্ত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি, থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ি, নানিয়ারচর, লংগদু, মানিকছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় কাজ করেন। দীর্ঘ চাকরির সুবাধে তিনি পার্বত্য উপজেলাগুলোয় উন্নত আম চাষের বিপ্লব ঘটান। বিশেষ করে বান্দরবানের পাহাড়ে আমের চাষ করিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। তিনি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও আম চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। পরবর্তীতে তারাও উন্নত আম চাষে জড়িয়ে পড়েন।

কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ বছর অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেক ছোট আম ঝড়ে পড়ে। এরপর বৃষ্টি শুরু হলে কালবৈশাখী ঝড়েও বাগানের অনেক আম ঝড়ে পড়ে। তাতে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন চাষীরা। এতসব সমস্যার পরও বর্তমানে বাগানে যেসব আম রয়েছে তা পরিচর্যায় ব্যস্ত দিন পার করছেন চাষীরা।’

বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগরে প্রায় ১৫ হেক্টর পাহাড়ি এলাকায় উন্নত জাতের আম চাষ করেছেন নিজামপুর এগ্রো প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। জানতে চাইলে দৈনিক পূর্বকোণকে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত গরম ও

কালবৈশাখী ঝড়ে এ বছর আম বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারপরও বাগানে যে পরিমাণ আম রয়েছে তা পরিপক্ক হতে শুরু করেছে। আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে আ¤্রপালি জাতের আম বাজারে যেতে শুরু করবে। এরপর ধীরে ধীরে অন্য জাতের আমও বাজারে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *