দুর্নীতিবাজ-দন্ডপ্রাপ্তরাও বাগিয়ে নিলেন পদোন্নতি!
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কৃর্তপক্ষের উপ পরিচালক এ এইচ এম আসিফ বিন ইকবাল। ২২ ব্যাচের এই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে শাস্তি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একারণেই তাকে দীর্ঘদিন পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি আওয়ামী শাসনামলে বঞ্চিত হওয়া কর্মকর্তাদের সাথে উপসচিব পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, ২০১৬ সালে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালে পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন পদোন্নতি পাওয়া এ এইচ এম আসিফ বিন ইকবাল। সেই টাকা স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। তদন্তে সেটা প্রমাণিতও হয়। এটিকে ঘুষ হিসেবে বর্ণনা না করে ‘অসদাচরণ’ হিসেবে উল্লেখ করে ইউএনওর শাস্তি হিসেবে দুটি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) বন্ধ রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
তৎকালীন যুগ্ম সচিব আ ন ম কুদরত ই খুদার নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তদন্তে প্রমাণ মেলে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আবদুল আলী নামের এক পাথর ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন ‘মেসার্স শাহ আনোয়ার আলী স্টোন ক্রাশার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব থেকে ক্রস চেকের মাধ্যমে দুই দফায় ২৫ ও ৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন ইউএনও আসিফ। সেই অর্থ তিনি তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। এই অর্থ হস্তান্তরের পরপরই সেখানকার কোয়ারিতে বোমা মেশিনের বিরুদ্ধে নজরদারি অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তাকে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় পদায়ন করা হলে সেখানেও বেপরোয়া ছিলেন এই কর্মকর্তা। এরপর দীর্ঘদিন তিনি পদোন্নতি পাননি।
সূত্র জানায়, আওয়ামী শাসনের দেড় দশকে দুর্নীতি এবং অনিয়মনের কারণে পদোন্নতি পাননি। এখন তাদের অনেকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সেজে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানের পরদিন সকাল থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি কর্মকর্তাদের সাথে তারাও যুক্ত হয়ে দলে দলে শোডাউন দিচ্ছেন।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের উপ-পরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) হিসেবে কর্মরত ছিলেন জয়নাল মোল্লা। বিসিএস ইকোনোমিক ক্যাডারে যোগদান করা এই কর্মকর্তা সর্বশেষ সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে স্থানীয় সরকার বিভাগের মূল্যায়ন-২ শাখায় কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সাথে এই কর্মকর্তাও উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। যদিও এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার পর তাকে শাস্তি দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেজন্য দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন তিনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সহকর্মীকে জোরপূর্বক যৌন হয়রানি/পীড়ন এবং হুমকি প্রর্দশনের অভিযোগ করেন তার মহিলা সহকর্মী কোহিনুর আক্তার। এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। বিভাগীয় মামলা তদন্ত শেষে তাকে এক বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত নামীয় লঘুদন্ড দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একারণে দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন এই কর্মকর্তা।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের উপ-পরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) হিসেবে কর্মরত ছিলেন কোহিনুর আক্তার। বিসিএস ইকোনোমিক ক্যাডারে যোগদান করা এই কর্মকর্তা সর্বশেষ সিনিয়র সহকারী প্রধান পরিকল্পনা কমিশনে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
সম্প্রতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সাথে এই কর্মকর্তাও উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার পর তাকে শাস্তি দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেজন্য দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন তিনি।
এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও কর্মস্থলে অশালীন, শিষ্টাচার বর্হিভূত, নৈতিক স্থলনজনিত কর্মকান্ডের কারণে অসদাচরণের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। বিভাগীয় মামলা তদন্ত শেষে তাকে তিরষ্কার নামীয় লঘুদন্ড দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একারণে দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন এই কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসক পদায়ন প্রক্রিয়া শুরু : দেশের বিভিন্ন জেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। যারা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের কর্মী অথবা সরকারের বিভিন্ন সময়ে সুবিধাভোগী। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্রজনতার বিপ্লবের পর জেলা গুলোতে অস্থিরতা তৈরীতে মদদ দিচ্ছেন। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক পদে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগের জন্য ফিটলিস্ট তৈরীর কাজ শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার প্রথম ধাপে ২৫ এবং ২৭ ব্যাচের ২৫ জন যোগ্য কর্মকর্তার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। যাচাই বাছাই শেষে যোগ্য কর্মকর্তাদের খুব শীঘ্রই দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
এর আগে আওয়ামী দু:শাসনের আমলে তৈরি করা ডিসি ফিটলিস্ট বাতিলের দাবি জানান প্রশাসন ক্যাডারের ২৪,২৫ ও ২৭ ব্যাচের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা।
অভিযোগ করে তারা বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সব জায়গাতেই পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু নতুন করে যাদের ডিসি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে তাদের ফিটলিস্ট আওয়ামী দু:শাসনের আমলে তৈরি। তাই আমরা এ তালিকা বাতিল করে এতদিনের পদবঞ্চিত কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে নিয়োগের দাবি জানিয়েছি।