দেবে যাওয়া বেইলি ব্রিজ সারেনি ৬ দিনেও
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে মাটি সরে গিয়ে দেবে গেছে বেইলি ব্রিজ। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে মাঝারি ও ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে ৬ দিন ধরে। ফলে ওই দুই উপজেলার মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে ছোট জিপ কিংবা মোটরসাইকেলে করে। এতে একদিকে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া, অন্যদিকে কাঁচামাল নির্দিষ্ট সময়ে শহরে নিতে না পারায় গুনতে হচ্ছে লোকসান।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ২৬ মে থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয় বান্দরবানে। এতে গত ২৮ মে বান্দরবানের রুমা-থানছি সড়কের লাইমি পাড়ার পাশে ব্রিজের নিচে মাটি সরে গিয়ে দেবে যায় একটি বেইলি ব্রিজ। ফলে ওইদিন দুপুর থেকে জেলা সদরের সাথে রুমা ও থানছি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়।
থানছি উপজেলার বাসিন্দা মংচিংসা মার্মা ও শুক্কুর আলী বলেন, এ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ার পর থেকে আমরা জীপ গাড়িতে করে আসা-যাওয়া করি। ব্রিজটি দেবে যাওয়ায় ব্রিজ পারাপারের সময় অনেক ভয় হয়। তবুও ঝুঁকি নিয়ে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময় গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেও ভাড়া দিতে হচ্ছে বেশি।
কাঁচামাল ব্যাবসায়ী মো. নাছির আলম বলেন, রুমা ও থানছি থেকে প্রতি সপ্তাহে দুইবার কলা, কাঁঠালসহ আম নিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। এ টাকায় আমার সংসার চলে। কিন্তু আজ ৬ দিন ধরে কোন মালামাল কিনতে পারছিনা।
জিপচালক মো. মোরশেদ বলেন, বান্দরবান রুমা সড়কের প্রায় ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ। ব্রিজগুলোর ওপর দিয়ে ৫ টনের অধিক ওজনের যানবাহন চলাচল নিষেধ থাকলেও প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাক চলাচল করে। ফলে ব্রিজটি দেবে গেছে। সামনের বর্ষায় অনেক ব্রিজ দেবে গিয়ে এ সড়কে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করেন তিনি।
জানা গেছে, জেলা সদরের সাথে রুমা যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সড়ক পথ। পাহাড়ি উঁচু-নিচু ও আঁকা-বাঁকা এসব সড়কে আশির দশকে নির্মাণ করা হয় ৫৬টি বেইলি ব্রিজ । এরমধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৪টি ব্রিজ মেরামত করা হলেও বাকি ৫২টি বেইলি ব্রিজ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ব্রিজের উপর দিয়ে দীর্ঘ বছর গাড়ি চলাচলের কারণে বিছানো লোহার পাটাতনগুলো ক্ষয়ে গেছে। জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হলেও পাটাতনগুলো খুলে গিয়ে অন্যত্র সরে গেছে অনেক স্থানে।
এদিকে বন্যা, পাহাড় ভাঙন ও ভূমিকম্পের কারণে দেবে গেছে অধিকাংশ ব্রিজ। তবু এ ব্রিজের উপর দিয়ে যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, চাঁদের গাড়িসহ শত শত যানবাহন চলাচল করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
থানচি বাস মালিক সমিতির লাইনম্যান সাহাব উদ্দীন বলেন, ব্রিজের এক পাশ দেবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে রুমা-থানচিতে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলে উদ্দিন চৌধুরী বলেন, খুব শিগগিরই দেবে যাওয়া ব্রিজটি সংস্কার করে বাসসহ সকল প্রকার যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে দেয়া হবে।
এছাড়া সড়ক প্রশস্তকরণসহ ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ ও বাঁকগুলো সংস্কার ও পুননির্মাণের জন্য নকশাসহ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।