ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বে ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সরকার সব ধর্মের বিশ্বাসীদের সঙ্গে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে চায়। আমরা চাই বাংলাদেশ সব সময় সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ বলে কোনো কথা নেই। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের সার্বিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমরা কাজ করি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ অগাস্টহত্যার পর প্রথমে বাংলাদেশকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র ঘোষণা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, ঘোষণাও দিয়েছিল খুনিরা, কিন্তু সেটি টেকেনি। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে দেশকে বিপথে নেয়ার চেষ্টা করেছিল ৭৫‘র খুনিরা।
শনিবার (২৫ মে) গণভবনে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে দেশের ধর্মীয় নেতা ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হল খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা,ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এ হামিদ জমাদ্দার, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, একুশে পদক বিজয়ী অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু, ভদন্ত শিলভদ্রা ভিক্ষু এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে অনেকেই আবার চেষ্টা করে বাংলাদেশকে ভিন্ন পথে নিতে। কিন্তু সেটা করতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষের মন মানসিকতা খুব উদার। সকলে একসঙ্গে চলতেই আমরা পছন্দ করি। সেভাবেই আমরা চলবো। প্রত্যেক ধর্মেরই মূল কথা যেটা গৌতম বুদ্ধও বলে গেছেন মানব কল্যাণ, জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। আমাদেরও সেই কথা। সকলে সুখে থাকবেন সুন্দর জীবন যাপন করবেন।
নেপালের লুম্বিনি ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের সঙ্গে সরকারের একটি চুক্তি রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে সেখানে একটি বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করার কথা রয়েছে। কারণ আমরা ভগবান গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থানে বাংলাদেশের একটি প্রতীক রাখতে চাই।
সরকার কাউকে ধর্ম বা বর্ণের ভিত্তিতে আলাদা করে দেখে না উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা দেশটাকে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ খুব উদার এবং সবাই একসঙ্গেই চলতে পছন্দ করি। প্রত্যেক ধর্মেরই মূল কথা মানবকল্যাণ। আমাদেরও সেই একই কথা।
দারিদ্র বিমোচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না। দরিদ্র ভুমিহীনদের বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের জীবন-জীবিকারও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামেও সরকার অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার দুর্ভিক্ষ যেমন দূর করেছে, তেমনি ওইসব এলাকার মানুষের খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করেছে। দারিদ্রের হার ইতোমধ্যে সরকার বিএনপি আমলে থাকা ৪১ ভাগেরও ওপর থেকে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ সালে দেশে হতদরিদ্র ছিল ২৫ দশমিক ১ ভাগ। সেখান থেকে আমরা ৫ দশমিক ৬ ভাগে আমরা নামাতে পেরেছি। কেউ এদেশে হতদরিদ্র থাকবেনা, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নই তার সরকারের উদ্দেশ্য।
‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’, এই স্লোগানটা তিনিই প্রথম দিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক ধর্মের উৎসবে সব ধর্মের মানুষ কিন্তু এই দেশে অংশ নেয়। পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্রে কিন্তু এটি আছে বলে জানা নেই।
বিএনপি সরকার নববর্ষ ও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন শতাব্দীতে পদার্পণ করব বলে আমরা একটি জাতীয় কমিটি করেছিলাম। খালেদা জিয়া তখন ক্ষমতায়, আমাদের অনুষ্ঠান করতে দেবে না। “বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করা না কি ‘হিন্দুয়ানি’। অদ্ভুত অদ্ভুত কথা শুনতে হত। সেই অনুষ্ঠানে বাধা দিল, কিন্তু দেশের মানুষ সেই বাধা মানল না। দেশের মানুষ যেটা ন্যায়সঙ্গত হয়, সেটিই করে। একপ্রকার জোর করেই আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকলাম, তখন হাজার হাজার মানুষ। আমরা দিবসটি উদ্যাপন করলাম।
বঙ্গবন্ধু সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন উল্লেখ করে তার কন্যা বলেন, প্রকৃতপক্ষে যার যার ধর্ম সে পালন করবে, এটাই ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যাও বিকৃত করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। কেউ কেউ এটার অপব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এটা আমরা স্পষ্ট করেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করবো।’