চট্টগ্রামরাজনীতি

নগর বিএনপিতে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের ‘মুলা’

তিন মাসের কমিটি পার করেছে সাড়ে তিন বছর। তবু নতুন করে কমিটি গঠনের কোনো তোড়জোড় নেই চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিতে। নগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা কেন্দ্রীয় সম্মেলনের ‘মুলা’ ঝুলালেও এতে সন্তুষ্ট নন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। অদূর ভবিষ্যতেও সম্মেলনের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তারা। এতে হতাশ নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে নিজেদের দলীয় কর্মসূচি থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। ফলে দিনদিন স্থবির হয়ে পড়ছে নগর বিএনপির কার্যক্রম।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর ডা. শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ৩৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ সময় তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনে করে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সম্মেলন হয়নি। এরই মধ্যে আহ্বায়ক কমিটির ৩৯ সদস্যের একজন মারা গেছেন। বর্তমানে এ কমিটির সদস্য সংখ্যা ৩৮।

পরবর্তীতে ২০২২ সালে দুই দফায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান নগর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বৈঠক করেন। এতে দ্রুত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনের কঠোর নির্দেশনা আসে। কমিটি করতে গঠন করে দেওয়া হয় ছয়টি সাংগঠনিক টিম। বেশ কিছুদিন সাংগঠনিক কার্যক্রম চালালেও দলীয় অন্তর্কোন্দলে ভেস্তে যায় সেই তৎপরতা।

জানতে চাইলে নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘করোনাকালীন সময়ে আহ্বায়ক কমিটি হয়েছিল। ওই সময় বিপর্যয় (করোনা) কাটিয়ে ওঠতে ব্যস্ত সময় গেছে। যার কারণে সম্মেলনের দিকে আগানো যায়নি। সামনে কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। সেখানেই নগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠিত হবে। ’

কবে নাগাদ নগর বিএনপির নতুন কমিটি হবে?-এমন প্রশ্নের জবাবে নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন নির্বাচন, আন্দোলন-সংগ্রাম সব মিলিয়ে ধাপের পর ধাপ পার হয়ে গেছে। এখন একটা চিন্তাভাবনা আছে, যেহেতু সামনে কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। সেখানে চট্টগ্রাম মহানগরসহ সারা চট্টগ্রামের যে থানা-ওয়ার্ডগুলো আছে; সম্মেলনের মাধ্যমে অচিরেই সবগুলো ঢেলে সাজানো হবে।’

যদিও কেন্দ্রীয় সম্মেলনের ৮ বছর অতিবাহিত হলেও অদূর ভবিষ্যতেও কেন্দ্রীয় সম্মেলনের কোন সম্ভাবনা দেখছেন না দলটির একাধিক নেতা। কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার বরাতে চলতি বছরেও কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র এক নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিভয়েস২৪-কে তিনি বলেন, ‘দলীয় হাইকমান্ড থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি, এ বছরও কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলেন, তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন করে নতুন কমিটি দেওয়ার কথা ছিল। অথচ বছর যেতে যেতে এখন সাড়ে তিন বছর শেষ। কেন্দ্র থেকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও কার্যকর উদ্যোগ নেই। এখন কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মুলা ঝুলানো হচ্ছে। মূলত নেতাদের দলীয় অন্তর্কোন্দল না মিটলে নতুন কমিটি হবে না—এটা নিশ্চিত।

তারা বলছেন, অনেকদিন ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। অনেকের পদ-পদবি না থাকায় বিভিন্ন কার্যক্রম সক্রিয় থেকেও বিব্রতবোধ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগর বিএনপিতে আমির খসরু-আবদুল্লাহ আল নোমানের দুটি বলয়। এর মধ্যে একটি বলয় চায় আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি হোক। ওই বলয়টি নতুন কমিটি করতে নানামুখী চাপও তৈরি করছে আহ্বায়ক কমিটির ওপর। তবে আরেকটি বলয় আহ্বায়ক কমিটি নিয়েই খোশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, ‘দলীয় নেতাকর্মীরা নতুন কমিটি চায়-এটা সত্য। তবে একটি পক্ষ আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করতে নানা দেনদরবার চালাচ্ছে। তবে সহসা কমিটি করার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। কারণ যারা কমিটি করবেন তাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ দেশের বাইরে। তিনি বর্তমানে আমেরিকাতে রয়েছেন। আর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম টানা কয়েকটি যৌথ সভা করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

নগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে এখনো এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ বছরের মধ্যে নগর বিএনপির কমিটির একটা গতি হবে।’

নগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্তের গুঞ্জন এবং নতুন কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘এ ধরনের কোনো বিষয়ে আমি অবগত নই। এটা কেন্দ্রীয় হাই-কমান্ড যেটা ভালো মনে করেন; সেভাবেই হবে। তাই এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *