চট্টগ্রামফটিকছড়িরাজনীতি

নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর ‘ধনী’ পরিবার, বছরে আয় ১৪ কোটি

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের দুবারের সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। তিনি এবং তাঁর দুই ছেলে ও স্ত্রীর বছরে মোট আয় ১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকারও বেশি। মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের পৈতৃক বাড়ি ছাড়াও ঢাকার গুলশানে ৫ কাঠা জমিতে ৫টি ফ্ল্যাট আছে ভাণ্ডারীর নামে। স্ত্রীরও রয়েছে নিজস্ব একটি ফ্ল্যাট। এছাড়া চারজনের ৬টি গাড়ি, নিরাপত্তায় দুটি আগ্নেয়াস্ত্রও আছে তাঁর পরিবারে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এবারও নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন তিনি। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে অন্যবারের মতো নৌকায় উঠার অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি। তবে হাল ছাড়ার মানুষ নন তিনি। সিভয়েসকে বললেন, ‘নৌকা না পাওয়ায় হতাশ হয়েছি। জোটে থাকা অন্যদের চেয়ে আমি কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। তবু এবারের নির্বাচনে আমাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এর পরও আমি মাঠে থাকব। নৌকা লাগবে না, দলের প্রতীক ফুলের মালা নিয়েই নির্বাচন করব।’

হলফনামার তথ্য বলছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক তরিকত ফেডারেশনের এই প্রার্থীর অস্থাবর ও স্থাবর মিলে (নিজ নামে) মোট সম্পদ আছে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭৫৩ টাকার। যার মধ্যে স্থাবর সম্পদ আছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ১১ হাজার এবং অস্থাবর সম্পদ ২ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৭৫৩ টাকার। এছাড়া তাঁর স্ত্রীর নামে স্থাবর-অস্থাবর মিলে মোট সম্পদ আছে ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫২ টাকার। এর মধ্যে স্থাবর সম্পদ ২০ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫২ এবং অস্থাবর সম্পদ ৩৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪৫২ টাকার।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ভাণ্ডারীর হাতে বর্তমানে নগদ আছে ১৭ লাখ ২ হাজার ৮৬৩ টাকা। এই খাতে স্ত্রীর আছে ১৮ লাখ ২১ হাজার ৫৭৭ টাকা। স্ত্রীর বৈদেশিক মুদ্রা না থাকলেও ভাণ্ডারীর হাতে আছে ১১ হাজার ৯৪ ইউরো। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৫১ লাখ ৩৭ হাজার ৫৪৭ টাকা। এই খাতে স্ত্রীর জমা ১৪ হাজার ৮৭৫ টাকা।

বন্ড ও ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—এমন কোম্পানির শেয়ার ৬ লাখ টাকা। স্ত্রীর আছে এই খাতে ৪ লাখ টাকা। ভাণ্ডারীর স্থায়ী আমানত (এফডিআর) আছে ৫৬ লাখ ১ হাজার ৬৭৬ টাকার। তবে তাঁর স্ত্রীর কোনো জমা টাকা নেই। দুবারের এমপি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর আছে ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকার দুটি গাড়ি এবং স্ত্রীর আছে ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা দামের আরো একটি গাড়ি।

এই প্রার্থীর নিজের নামে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী থাকলেও স্ত্রীর আছে ২ লাখ টাকার। তাঁর নামে আসবাবপত্র আছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার। স্ত্রীর আছে ১ লাখ টাকার। এছাড়া, ব্যবসায়ীক পুঁজি বাবদ তাঁর আছে ১৯ লাখ ৩৪ হাজার ১৭৭ টাকা এবং দুটি আগ্নেয়াস্ত্র আছে ৯০ হাজার টাকার। ব্যবসাতে তাঁর স্ত্রীর পুঁজি না থাকলেও আছে ১০ ভরি স্বর্ণ।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে এই প্রার্থীর নিজ নামে কৃষি জমি রয়েছে ৬৬২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যার অর্জনকালীন সময়ের মূল্য ৫৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। তবে কৃষিজমি নেই তাঁর স্ত্রীর। এছাড়া তাঁর রয়েছে গুলশান মডেল টাউনে ৫ কাঠা জমি। সেই জমির ওপরে করা বাড়িতে আছে ৫টি ফ্ল্যাট। যার মূল্য ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া মা, বোন ও ভাগ্নী থেকে হেবা সূত্রে পাওয়া ২টি ফ্ল্যাটও রয়েছে তাঁর। যার মূল্য ৮৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মাইজবান্ডার দরবার শরীফের পৈত্রিক বাড়ি ও ফ্ল্যাটও রয়েছে তাঁর নামেই। বিপরীতে তাঁর স্ত্রীর নামে রয়েছে কেবল ১ টি ফ্ল্যাট। যার মূল্য ২০ লাখ ৪৮ হাজার ৫শ টাকা।

ভাণ্ডারীর বার্ষিক আয় ৫৪ লাখ

নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর বার্ষিক আয় ৫৪ লাখ ৩৭ হাজার ৬২৭ টাকা। যার মধ্যে ব্যবসা থেকে আয় ৩৬ লাখ ৪০ হাজার ৮০১ টাকা। এই খাতে তাঁর স্ত্রীর আয় ৭১ হাজার ২২৬ টাকা, বড় ছেলের ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪৫০ টাকা, ছোট ছেলের ১৩ লাখ ৪ হাজার ৩৩৩ টাকা। বাড়ি ভাড়া থেকে ভাণ্ডারির স্ত্রীর ৪ লাখ ৭ হাজার টাকা আয় থাকলেও এই খাতে আয় নেই তাঁর এবং দুই ছেলের।

এছাড়া, শেয়ার এবং সঞ্চয়পত্র বাবদ তাঁর আয় ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯ টাকা। এই খাতে তাঁর স্ত্রীর আয় না থাকলেও বড় ছেলের আয় ৯ লাখ ১৯ টাকা এবং ছোট ছেলের আয় ৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮৯ টাকা।

পেশা হিসেবে ব্যবসা এবং কনসাল্টেন্সি উল্লেখ করা এই প্রার্থীর চাকরি থেকে কোনো আয় নেই। তবে এই খাতে তার স্ত্রীর ৪ লাখ ৪ হাজার, বড় ছেলের ২ লাখ ৮৪ হাজার এবং ছোট ছেলের আয় ৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এছাড়া জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে ভাণ্ডারী সম্মানি ভাতা পান বছরে ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৭ টাকা।

স্ত্রী–পুত্ররা মিলে ব্যবহার করেন ৬টি গাড়ি

নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর নিজের নামে রয়েছে দুটি গাড়ি। গাড়ি দুটির মূল্য ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া তার স্ত্রীর নামেও রয়েছে ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা দামের একটি গাড়ি। তার বড় ছেলের নামে রয়েছে ৭ লাখ মূল্যের এবং ছোট ছেলের নামে ৩২ লাখ টাকা মূল্যের দুটি গাড়ি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *