কক্সবাজারচট্টগ্রাম

নতুন বছরেও কক্সবাজারে দুই দশকের মধ্যে পর্যটক সর্বনিম্ন

কক্সবাজার: সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চ পড়ে আছে নীরব নিথর। সৈকতের অন্য পয়েন্টে বা হোটেল মোটেলেও দেখা যায়নি তেমন আউটডোর-ইনডোর আয়োজন।

পুরো সৈকতজুড়ে দেখা গেছে মাত্র কয়েক হাজার পর্যটক। এমনই নিষ্প্রাণভাবে বিদায় জানানো হল বছরের শেষ সূর্যকে। ইংরেজি পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে এবং নতুন বছরকে বরণ করতে প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের কয়েকদিন আগে থেকেই দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে উপচে পড়ত লাখো পর্যটক।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রম এবং কক্সবাজারে আউটডোর-ইনডোর কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন না থাকায় এবার পর্যটকদের সাড়া নেই বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

হোটেল মালিকরা বলছেন, প্রতি বছর দুই ঈদ এবং থার্টি ফার্স্ট এর ছুটিতে দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এ সময় হোটেল-মোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। কক্ষ না পেয়ে অনেকেই রাত কাটান খোলা আকাশের নিচে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। থার্টি ফার্স্টের ছুটিতে পর্যটকদের সাড়া নেই কক্সবাজারে। হোটেলগুলোর বেশির ভাগ কক্ষই ফাঁকা। এমন পরিস্থিতি গত দুই দশকেও দেখা যায়নি বলে জানান জেলা প্রশাসনের সৈকত কর্মী বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, এবারের থার্টি ফার্স্টের ছুটিতে কক্সবাজারে খুব কম পর্যটক এসেছেন। রোববার সৈকতে সাধারণ ছুটির দিনের চেয়েও কম পর্যটক দেখা গেছে। অথচ এ সময়ে দায়িত্ব পালনে আমাদের হিমশিম খেতে হতো।

সাগরপাড়ের তিন তারকা হোটেল সী-ক্রাউনের মহাব্যবস্থাপক ইকবাল মহসিন জানান, তাদের হোটেল কক্ষ আছে শতাধিক। রোববার মাত্র ৫৫টি কক্ষ বুকিং হয়েছে। আর ১ জানুয়ারির অবস্থা আরও নাজুক।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, থার্টি ফার্স্টের ছুটিতে কক্সবাজারের হোটেলগুলোর বেশির ভাগ কক্ষ এখনও খালি। কিছু হোটেলে মাত্র ২০ থেকে ২৫ ভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে। এমন পরিস্থিতি গত দুই যুগেও দেখা যায়নি বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, এবারের থার্টি ফার্স্টের ছুটিতে কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে তেমন বুকিং নেই। যা আছে তাও এক জানুয়ারি থেকে খালি হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের কারণে উন্মুক্ত মঞ্চে কনসার্ট বা কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজনে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় পর্যটক আসেনি। সে কারণে পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে ইনডোর কোনো আয়োজনও এবার রাখা হয়নি।

হোটেল মালিকরা জানান, কক্সবাজারে পর্যটকদের আবাসনের জন্য ছোট বড় ৩৮০টি হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউজ-কটেজ আছে। যেখানে থাকে লক্ষাধিক পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে টানা দেড় মাস পর্যটক শূন্য ছিল কক্সবাজার। এ কারণে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের অধিকাংশ কক্ষ খালি পড়ে ছিল।

তবে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ১৪ ডিসেম্বর থেকে পাঁচ দিনের ছুটিতে পর্যটন ব্যবসা কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠলেও পরে আবার ঝিমিয়ে পড়েছে। অবশ্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকলে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নামতে বলে ধারণা পর্যটন ব্যবসায়ীদের।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, নানা কারণে এবার একটু পর্যটক সমাগম কম হচ্ছে। তবে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হয়, তা দেখভাল করতে একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, আমাদের কাছে পর্যটকদের নিরাপত্তাই প্রধান। ভ্রমণে এসে কোনো পর্যটক যেন হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *