চট্টগ্রাম

নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য নেই বরাদ্দ

নগরের খাল-নালা গুলো অরক্ষিত, নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য নেই বরাদ্দ। চার বছরে মারা গেছে ৯ জন জলাবদ্ধতা নিরসনে চলছে তিন সংস্থার ১৪,৩৮৯ কোটি টাকার চার প্রকল্পের কাজ।

বাকলিয়া বগারবিল শান্তিনগর বাজার রোড। এ সড়কের বিভিন্ন অংশে একপাশে রয়েছে চাক্তাই খাল। অপর পাশে রয়েছে দোকানপাট ও ঘরবাড়ি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে। শিশুদেরও খেলতে এবং দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায় এ সড়কে। সেখানে খালপাড়ে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী বা রেলিং নেই। তাই সারা বছরই অসাবধানতাবশত পথচারী এবং শিশুদের খালে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি আছে। গত সোমবার ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ডুবে যায় সড়কটি। সড়ক ও খাল প্রায় মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ফলে সেদিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।

শুধু বগারবিল এলাকা নয়। শহরের খাল–নালার পাশে এমন অসংখ্য স্পট রয়েছে যেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। অর্থাৎ অরক্ষিত রয়েছে খাল–নালা। অনেক এলাকায় রেলিংবিহীন অনেক ব্রিজও রয়েছে। যেগুলোও জন যান ও জন চলাচলে ঝুুঁকিপূর্ণ।

নগরবাসী বলছেন, নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় তারা সবসময় দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে আছেন। ঘনিয়ে আসছে বর্ষা। তাই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে দাবি করে তারা বলছেন, বর্ষার সময় অরক্ষিত খাল–নালায় পড়ে প্রাণহানি ঘটার শঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে তিন সংস্থার ১৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকার চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে কোনো প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) শহরের আভ্যন্তরীণ খাল–নালার পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়ার বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত নেই। ফলে এ খাতে আলাদা কোনো বরাদ্দও নেই প্রকল্পে। তাই প্রকল্পগুলোর আওতায় খাল–নালার পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ খুব বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে না।

অবশ্য ঝুঁকি আছে এমন অনেক জায়গায় স্ব উদ্যোগে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের আওতায় এ বেষ্টনী দেয়া হয়। কিছু কিছু জায়গায় চসিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও স্ল্যাব দিয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে দাাবি করেছেন নগরবাসী।

নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় অরক্ষিত খাল নালায় পড়ে প্রতি বছর ঘটছে প্রাণহানি। গত চার বছরে খাল–নালায় পড়ে মারা যান ৯ জন। সর্বশেষ গত সপ্তাহে মারা যান দুইজন। অতীতে বিভিন্ন সময়ে খাল–নালায় প্রাণহানির জন্য চসিক ও সিডিএ’কে দায়ী করা হয়। এছাড়া নালায় পড়ে মৃত্যুর জন্য চসিক ও সিডিএ’র চরম অবহেলা দাবি করে সিডিএ চেয়ারম্যান ও চসিক প্রধান নির্বাহীসহ ১৩ জনকে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছিল ‘চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ (সিসিবি ফাউন্ডেশন)।

চার প্রকল্পে রেলিংয়ের বরাদ্দ নেই : সিডিএ’র ৮ হাজার ৬২৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনর্খনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগাপ্রকল্প এবং ২ হাজার ৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক দুটি প্রকল্পের কাজ চলছে।

এছাড়া চসিকের রয়েছে এক হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ‘নগরের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন’ শীর্ষ প্রকল্প এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক হাজার ৬২০ কোটি টাকার ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের কাজ চলছে। তিন সংস্থার এ চার প্রকল্পের কোনোটিতেই খালের পাড়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে রেলিং দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *